প্রতীকী ছবি।
জেলার ৩৬টি পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্ক নেই শুনে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামীণ এলাকায় তিনি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বাড়াতে নির্দেশ দেন। চলতি বছরের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সেই বাঁকুড়া জেলা সফরের পরে বছর ঘুরতে চলল, কিন্তু ওই পঞ্চায়েতগুলিতে একটিও ব্যাঙ্ক তৈরি হয়নি। ফলে, বার্ধক্যভাতা থেকে একশো দিনের মজুরি—বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা তুলতে বহু দূরের ব্যাঙ্কে যেতে ঘাম ছুটছে বাসিন্দাদের। ওই সব পঞ্চায়েতে ‘ব্যাঙ্কমিত্র’ নিয়োগের কথা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও অনেক সময় তাঁদের দেখা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। গ্রাহকদের প্রশ্ন, মোদী সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র বাইরেই কি থেকে যাবেন বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন!
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়ায় মোট ১৯০টি পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে ৩৬টি পঞ্চায়েতেই কোনও ব্যাঙ্ক নেই। জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ ব্লকের পুড্ডি পঞ্চায়েত, কিংবা হিড়বাঁধ ব্লকের গোপালপুর পঞ্চায়েত অথবা কৃষি-প্রধান ইন্দাস ব্লকের মঙ্গলপুর পঞ্চায়েতের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ব্যাঙ্ক নেই। ১০ কিলোমিটার, কিংবা আরও বেশি পথ হেঁটে, বাসে, ট্রেকারে যেতে হয়। তাতে সময় ও ভাড়ার টাকা— দুই নষ্ট হচ্ছে। অথচ, ব্যাঙ্ক ছাড়া এখন গতি নেই। কন্যাশ্রী থেকে রূপশ্রী, একশো দিনের কাজের মজুরি থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রির চেক ভাঙাতে মানুষকে ব্যাঙ্কে যেতেই হবে। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, কৃষক পেনশন থেকে আবাস যোজনার টাকা পেতেও ভরসা সেই ব্যাঙ্ক।
এক বিডিও বলেন, “ডাকঘরে সরাসরি এনইএফটি করে টাকা পাঠানো যায় না। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলি। এখনও যাঁরা ডাকঘর থেকে পেনশন পাচ্ছেন, তাঁদেরও আমরা ব্যাঙ্কের আওতায় আনতে চাইছি।” ব্যাঙ্কে সরাসরি টাকা পাঠানোয় প্রশাসনের তরফে সুবিধাজনক হলেও এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকলে উপভোক্তাদের দুর্ভোগ হচ্ছে।
ওন্দা ব্লকের পুনিশোল পঞ্চায়েতের (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ২২,১৯৩ জন বাসিন্দা) সেহেরাবানু বিবি খান আশাকর্মী। তিনি বলেন, “এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই। মাইনে তুলতে আট-নয় কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যেতে হয়। দরকার পড়লে টাকা তুলতে পারি না। খুবই সমস্যায় রয়েছি।” তালড্যাংরার শালতোড়া, সাতমৌলি ও ফুলমতি পঞ্চায়েতেও একই সমস্যা।
বাঁকুড়ার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জিত নন্দী দাবি করেছেন, ‘‘যে সব পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে ব্যাঙ্কমিত্রেরা গ্রাহকদের পরিষেবা দেন।” যদিও গ্রাহক সংখ্যার তুলনায় ব্যাঙ্কমিত্র কম হওয়ায় সমস্যা সেই রয়েই গিয়েছে বলে পাল্টা দাবি করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বেসরকারি ব্যাঙ্ক, এমনকি, জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকেও ওই সব এলাকায় শাখা খোলার জন্য একাধি,বার আলোচনায় বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “দরকার পড়লে পঞ্চায়েতের তরফে জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া, এমনকি, পরিকাঠামোও দেওয়া হবে। রাজ্য প্রশাসনও আলোচনা চালাচ্ছে। শীঘ্রই ফের জেলার ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ে বসব।’’