চুরি বাড়ছে পথে, পুলিশ কোথায়

ফের ছিনতাই! মঙ্গলবারের পরে বুধবার— এ বার ঠিক থানার সামনে থেকেই, দিনের আলোয়! একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে একের পর এক চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং বেড়েই চলেছে।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৪১
Share:

ফের ছিনতাই! মঙ্গলবারের পরে বুধবার— এ বার ঠিক থানার সামনে থেকেই, দিনের আলোয়!

Advertisement

একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে একের পর এক চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং বেড়েই চলেছে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সুরক্ষা বাহিনী, স্থানীয় থানার নজর এড়িয়ে মঙ্গলবার দুপুরে শান্তিনিকেতনের অবনপল্লির বাসিন্দা রঞ্জিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাগ ছিনতাই হয়েছিল। আর বুধবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ঠিক শান্তিনিকেতন থানার সামনে থেকেই! এ বারও দুই মোটরবাইক আরোহী এসে একই কায়দায় ছিনিয়ে নেয় ব্যাগ! স্থানীয়রা বলছেন, পর পর দুটি ঘটনায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কতটা নিরাপদ শান্তিনিকেতন! প্রশ্ন উঠছে, শান্তিনিকেতনে আলাদা থানা করে করে কি ফল হয়েছে সে নিয়ে!

এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, চুরি, ছিনতাই, ছাত্রী ও মহিলাদের সম্মান হানি তথা হেনস্থার মতো ঘটনা নিত্য দিনের। সন্ধের পরে কয়েকটি ঠেক কেন্দ্র করে অপরাধী, দুষ্কৃতীদের দাপাদাপিতে এলাকার চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। বুধবার গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা গৌরী মুখোপাধ্যায় আদালতের একটি কাজ সেরে বাবা সুদর্শন ভট্টাচার্যকে নিয়ে দুটি সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, থানার সামনের রাস্তায় দুই বাইক আরোহী এসে সাইকেলের বাস্কেট থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। চিৎকার করেও কোনও লাভ হয়নি। গৌরীদেবী বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতন রাস্তায় ভিড়ের কারণে, থানার সামনের রাস্তা ধরে দুটি সাইকেলে বাবা ও আমি বাড়ি ফিরছিলাম। দ্রুত গতিতে পিছন থেকে বাইকে এসে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালাল দুই বাইক আরোহী। মোবাইল, টাকা এবং কিছু জরুরী কাগজপত্র ছিল ব্যাগে। অভিযোগ জানিয়েছি থানায়।’’

Advertisement

অবনপল্লির বাসিন্দা রঞ্জিনীদেবী, গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা গৌরীদেবীর ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

শান্তিনিকেতনে যেমন জনসংখ্যা ও জনবসতি বাড়ছে তেমনই তাকে ঘিরে দোকান বাজার বাড়ছে। বাড়ছে বহিরাগতদের সংখ্যাও। পাল্লা দিয়ে সমান তালে বাড়ছে চুরি, ছিনতাই এবং ছাত্রী ও মহিলাদের হেনস্থা করার মতো অপরাধের ঘটনা। দিন দিন অপরাধ বাড়ায় এলাকায় ক্ষোভও বাড়ছে।

২০১৫ সালের অপরাধের ঘটনার ওপর নজর ঘোরালে দেখা যাবে শান্তিনিকেতন এলাকা থেকে পর পর চন্দন গাছ চুরি গিয়েছে। অন্যদিকে আশ্রম লাগোয়া সীমান্তপল্লি, রতনপল্লি, অবনপল্লি, পূর্বপল্লি, গুরুপল্লি, বিনয়ভবন লাগোয়া এলাকা-সহ বহু এলাকার বাড়ি থেকে চুরি এবং সংলগ্ন রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী বিশ্বভারতীর ত্রিস্তর নিরাপত্তা বলয়ের চোখে ধুলো দিয়েও চুরি হয়েছে বহু চন্দন গাছ। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, মাস কয়েক আগে উত্তর শিক্ষা সদন রাস্তার পাশে সাইকেলে যাওয়া দুই ছাত্রীর পিছু নেয় মোটরবাইক চালক। বাস্কেট থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে পালায়। শিক্ষাভবন লাগোয়া মৈত্রী গার্লস হস্টেল এলাকার রাস্তায় তিন ছাত্রীর পথ আগলে, টানাহেঁচড়া করার অভিযোগ উঠেছে বাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে।

থানার সামনের রাস্তা থেকে বিশ্বভারতীর ভিন রাজ্যের ছাত্রীর ব্যাগ চুরি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার পিছনের রাস্তায় বাংলাদেশের এক ছাত্রীর ব্যাগ ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা, ইতিহাসের অধ্যাপিকা ছন্দা চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাগ ছিনতাই, সাতসকালে ভুবনডাঙার বাসিন্দা বিএসএনএল মহিলা কর্মীর সোনাদানা ছিনতাই ও পায়ে গুলির ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। সীমান্তপল্লি এলাকার বাসিন্দা জগদীশ সরকারের বাড়ি তাঁর প্রতিবেশী, পেশায় বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা বিভাগের কর্মী বিপদতারণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে চুরি, পাঠভবনের কর্মী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়িতে চুরিরও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। কেবল শান্তিনিকেতন নয়, বোলপুর শহরে সাম্প্রতিক কালে বেড়েছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা।

কেবল শহরের বাড়ি নয়, এলাকার দোকান, বাজার থেকে কোথাও লোহার দরজা কেটে চুরি আবার কোথাও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকার ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে কয়েক মাসে!

স্বাভাবিক ভাবে এহেন চুরি, ছিনতাই ঘটনায় ক্ষোভ বেড়েছে বাসিন্দাদের পাশাপাশি ব্যাবসা সমিতি এবং এলাকার নাগরিক সমাজের। এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শহরে ক্রমাগত বাড়তে থাকা চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনার কিনারার দাবি তুলেছেন। এলাকার ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘সকলে চায় নিরাপত্তা। কিন্তু হচ্ছে কই? হাট, বাজার, ব্যাঙ্ক চত্বর থেকে চুরি, ছিনতাই সমানে বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে চলছে বাড়ি ও দোকান থেকে চুরির ঘটনাও।’’

নাগরিক সমিতির পক্ষে সম্পাদক চিকিৎসক মোহিত সাহা বলেন, ‘‘এলাকার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ নজরদারি এবং টহলদারি বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সদর্থক ভূমিকা পুলিশ দেখাতে পারেনি। আলাদা থানা হয়ে লাভটাই বা কি হয়েছে?’’

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ধৃতদের অনেকে জেরায় জানিয়েছে, নেশা করার জন্য, টাকার অভাবে এমনই সহজ পথে ছাত্রী, মহিলা বা মহিলা কর্মীদের চোরেরা টার্গেট করছে। বাইরে থেকেও কিছু দুষ্কৃতী ঢুকছে হেলমেট পরে।

কি বলছে জেলা পুলিশ? জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement