পরিবেশনে পুলিশ সুপার।
মাওবাদীদের হাতে ২০০৩ সালে যেখানে খুন হয়েছিলেন বান্দোয়ান থানার তৎকালীন ওসি নীলমাধব দাস, সেই এলাকায় গিয়ে শনিবার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বহিরাগতদের আনাগোনা সম্পর্কে বাসিন্দাদের সজাগ করলেন। এ দিন বান্দোয়ানের কুমড়া পঞ্চায়েতের কাঁটাগড়া গ্রামের ফুটবল ময়দানে জনসংযোগ কর্মসূচি ছিল পুলিশের। সেখানে পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া গ্রামবাসীকে বলেন, ‘‘বাইরের লোক যদি আপনাদের গ্রামে এসে মিটিং করে, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন। পুলিশ আপনাদের গ্রামে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছে বলে মনে করবেন। তাই পুলিশকে কাছে টেনে মনের কথা বলুন। সমাধান মিলবে।’’
এ রাজ্যে মাওবাদীদের নাশকতা দীর্ঘদিন বন্ধ। কিন্তু পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে সক্রিয় মাওবাদীরা। ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা এ রাজ্যের এলাকাগুলিতে তাই সতর্ক পুলিশ ও প্রশাসন। ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বান্দোয়ানের কুমড়া পঞ্চায়েতের কাঁটাগড়া গ্রামে এ দিন পুলিশের তরফে কুমড়া ও ধাদকা পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের নিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল।
সেখানে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এক সময়ে এই এলাকায় পুলিশ আধিকারিক নীলমাধব দাস খুন হয়েছিলেন। এখন অবশ্য শান্তি ফিরেছে। গত আট বছরে এখানে গুলির শব্দ আর শোনা যায় না। কিন্তু আপনাদের সঙ্গে আমাদের ঠিকমতো বন্ধুত্ব এখনও হয়ে ওঠেনি। তাই আপনাদের সঙ্গে আমাদের আরও বন্ধুত্ব দরকার। আপনাদের অসুবিধার কথা আমাদের জানান। ঠিক সময়ে সমস্যার কথা জানতে পারলে, আমরা তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে পারব। আপনাদের পাশে থাকতে পারব।’’
শুধু তা-ই নয়। এই এলাকার যে সব লোকজন বাইরে কাজের খোঁজে যান। তাঁদের সম্পর্কেও তথ্য রাখতে চাইছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এখান থেকে অনেক ছেলেমেয়ে বাইরে কাজ করতে যান। আপনারা পারলে তাঁদের নাম, ঠিকানা জানান। সেখানে তাঁরা সমস্যায় পড়লে, আমরা তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে পারব।’’ এমনকি, জঙ্গলে গাছকাটা সম্পর্কেও বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর চাইছে পুলিশ।
মাওবাদীদের আনাগোনা এ রাজ্যে না থাকলেও, তারা তলে তলে পুরনো ‘লিঙ্কম্যান’দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে বলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন। সে প্রসঙ্গে পুলিস সুপার দাবি করেন, ‘‘মাওবাদীরা তাঁদের পুরনো লিঙ্কম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু পেরে উঠছে না।’’
নাচ-গানও হয়। পরে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগ, খাতা-পেন এবং বড়দের শাড়ি, জামা, লুঙ্গি, ধুতি তুলে দেওয়া হয়। বর্ষায় যাতে বসবাসের অসুবিধা না হয়, সে জন্য বাসিন্দাদের ত্রিপল, মশারি দেওয়া হয়। শেষে ছিল খিচুড়ি, সব্জি দিয়ে পঙ্ক্তিভোজ। জেলা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে ছিলেন সিআরপি-র আধিকারিকেরাও। নিজস্ব চিত্র