প্রতীকী ছবি
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় লকডাউন চলছে দেশ জুড়ে। বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রায় সব অফিস কাছারি, শিল্প, ব্যবসাপত্র। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো বন্ধ। তাই বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করা, অনলাইনে পড়াশোনা বা বিনোদন— সবকিছুর জন্যই এখন ভরসা ইন্টারনেট। লকডাউনের জেরে এক ধাক্কায় বেড়েছে ইন্টারনেটে ডেটা খরচের বহর। মোবাইল নেট তো আছেই, আরও বেশি ব্যবহারের জন্য চাহিদা বাড়ছে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের।
ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, জেলা জুড়ে নতুন ব্রডব্যান্ড সংযোগের গ্রাহক হওয়ার হিড়িক বেড়েছে। যাঁরা সংযোগ নিয়েও নিয়মিত রিচার্জ করাতেন না, তেমন গ্রাহকরাও বলছেন রিচার্জ করিয়ে দিতে। জেলায় একাধিক বেসরকারি ব্রডব্যান্ড সংস্থার হয়ে কাজ করা অপারেটররা জানাচ্ছেন এমনটাই। সহমত বিএসএনএলের মতো সরকারি দফতরের আধিকারিকরাও। তবে আক্ষেপও রয়েছে তাঁদের। অপারেটরদের একাংশ বলছেন, ‘‘কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় উপযুক্ত যন্ত্রাংশ না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারছি না।’’
দুবরাজপুর-সহ বীরভূমের একটা বড় অংশে একটি বেসরকারি সংস্থার ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দেন শেখ রেজ্জাক। সঙ্গে বিএসএনএলের নতুন ফাইবার টু দ্য হাউস বা এফটিএইচ ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও দেন তিনি। রেজ্জাক বলছেন, ‘‘দুটি মিলিয়ে ১০০টি অতিরিক্ত সংযোগ দিয়েছি। কিন্তু যন্ত্রাংশের সমস্যার জন্য সব চাহিদা পুরণ করা যায়নি।’’ একই বক্তব্য সিউড়ির অজয় চট্টোপাধ্যায় এবং রামপুরহাটের রবিউল আলমেরও। দু’জনেই জানাচ্ছেন, যেটুকু সম্ভব ছিল সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিএসএনএলের এক আধিকারিক সুমন নাথও বলছেন, ‘‘সত্যিই চাহিদা বেড়েছে। যন্ত্রাংশের সমস্যা না থাকলে সংযোগ আরও অনেক বাড়ত।’’
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, লকডাউন উঠলেও কবে সব স্বাভাবিক হবে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। বহু অফিস আদালত বন্ধ। কিন্তু তাতে কাজ থেমে নেই। সরকারি ঘোষণা অনুয়ায়ী, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ অভ্যস্ত হতে গেলেও বাড়িতে শক্তিশালী ইন্টারনেট থাকা প্রয়োজন। সব সময় মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে কাজ চলে না। তার দৈনিক ব্যবহারের সীমাও রয়েছে। তাই অনেকেই শুধুমাত্র অফিসের কাজের জন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছেন। তেমনই একজন দুবরাজপুরের দেবদত্ত ঘোষ। দেবদত্তবাবু কলকাতার একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন শুরু আগেই ১৮ মার্চ বাড়ি ফিরে কাজের সুবিধার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছি।’’
লকডাউনের সময়ে বাড়িতে কেবল বসে না থেকে একটি অনলাইন কোর্স করার জন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছেন সিউড়ির যুবক সুনির্মল কর্মকার। তিনি বলছেন, ‘‘টানা ক্লাস করতে এ ছড়া আর উপায় ছিল না।’’ চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী সুমন্ত পাল। তাঁকে বর্ধমানে একটি কোচিং সেন্টারে যেতে হতো। লকডাউনে এখন ক্লাস হচ্ছে ফেসবুক লাইভে। তিনিও ব্রডব্যান্ড নিয়েছেন। সুমন্ত জানাচ্ছেন, যে মোবাইল নেটওয়ার্ক তিনি ব্যবহার করেন তাতে দিনে দেড় জিবি ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অনলাইনে ক্লাসের জন্য সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। তাই তিনিও ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছেন।
দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে স্কুলে স্কুলে। মোবাইলে ইন্টারনেট থাকলেও সন্তানদের সব সময় মোবাইল হাতে দিতে পারছেন না অভিভাবকেরা। সন্তান যাতে কম্পিউটার বা ট্যাবে ক্লাস করতে পারে সে জন্য অনেক স্বচ্ছল পরিবার ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছেন। সিউড়ির ১৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মানসী ঘোষ তাঁর মেয়ে রূপকথার জন্য একই রাস্তা নিয়েছেন। রূপকথা সিউড়ি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মানসীদেবী জানাচ্ছেন, ‘‘শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে মেয়ে অনলাইনে ক্লাস করতে পারছিল না।’’ এই তালিকা দীর্ঘ।
কেবল কাজের জন্যই নয়, বিনোদনের জন্যও চাহিদা বেড়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের। বাড়িতে টানা থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। টিভিতে যে সিনেমা দেখানো হয় তা পুরনো হয়ে গিয়েছে। তাই পছন্দের নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখতে অনেকেই বিনোদন অ্যাপের গ্রাহক হয়েছেন।
বোলপুরের জয়দীপ সাহা, দুবরাজপুরের পায়েল ঘোষ, রামপুরহাটের রীতম কুণ্ডুরা বলছেন, ‘‘বাড়িতে বন্দি থাকায় এখন ইন্টারনেট খরচের বহর বেড়েছে ভীষণ ভাবে। ক্লাস করাই হোক বা সিনেমা দেখা মোবাইলের সীমিত ডেটায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।’’ তাই যাঁর পক্ষে সম্ভব তিনি ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেওয়ার কথা ভেবেছেন বা মোবাইল নেটওয়ার্কের প্ল্যান বদল করার কথা ভাবছেন।