সার দিয়ে, বস্তা বন্দি। সোমবার বিষ্ণুপুর ব্লকের সুভাষ পল্লী গ্রামে। ছবি শুভ্র মিত্র।
হিমঘরে মজুত রাখা পুরনো আলুর দাম কমে তলানিতে ঠেকেছে। গুণগত মানও পড়ছে। হিমঘরে এখনও জমে রয়েছে পুরনো আলু। তারপরেও খোলা বাজারে পুরনো আলুর দর কেন পড়ছে না, প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারা।
বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন বাজারে এখন জলদি আলুর দাম যাচ্ছে কেজি প্রতি ১২-১৫ টাকা। কিন্তু পুরনো আলুর দাম বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২০-২২ টাকা দরে। ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা, যত দিন যাচ্ছে, পুরনো আলুর গুণগত মান খারাপ হচ্ছে। আলুর আকারও ছোট। ভিতরে দাগ দেখা যাচ্ছে। তারপরেও পুরনো আলুর দর কেন ২০ টাকার নীচে নামছে না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, জেলার বেশির ভাগ হিমঘরই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। কিছু হিমঘরে আলু মজুত আছে। সার্বিক ভাবে জেলায় প্রায় এক লক্ষ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি আলু থাকে) পুরনো আলু রয়েছে। খোলা বাজারে চাহিদা কমতে থাকায় ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারছেন না। হিমঘরেও পুরনো আলুর দর কমে গিয়েছে। সেখানে আলুর দাম কেজি প্রতি সাড়ে সাত টাকা থেকে ১১ টাকা। তাহলে কেন খোলা বাজারে আলু কেজি প্রতি ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’-র রাজ্য উপদেষ্টা বিভাস দে বলেন, “আমরা বার বার বলেছি খোলা বাজারের দরে আমাদের কোনও হাত নেই। সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। কেন খোলা বাজারে দর এখনও নামছে না, তা তদন্ত করে দেখুক প্রশাসন।”
ঘটনা হল, প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরের মাসের মধ্যেই হিমঘরগুলি থেকে পুরনো আলু বেরিয়ে যায়। এ বার এখনও তা হয়নি। এ জন্য রাজ্য সরকারকেই দুষছেন আলু ব্যবসায়ীরা। বিভাসের আক্ষেপ, “এখন যে আলু হিমঘরে রয়ে গিয়েছে তা আদপে উদ্বৃত্ত। সঠিক সময়ে বাজার না পাওয়ায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা হিমঘরে রাখা আলু বিক্রি করতে পারেননি। এখন বড় পরিমাণে লোকসান হচ্ছে তাঁদের। ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করায় এই ক্ষতি হল।’’ বাজারে দর না কমার পিছনে খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশ চাহিদা ও জোগানের তারতম্যকেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন।
বাঁকুড়ার লালবাজারের এক আলু ব্যবসায়ী বলেন, “আলুর দর কেজি প্রতি ৩০ টাকা থেকে কমে ২০ টাকা হয়েছে। তবে তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় ও স্বাদ তুলনায় ভাল বলে এখনও ক্রেতাদের একাংশ পুরনো আলু কিনতে চাইছেন। অন্যদিকে, বাজারে পুরনো আলুর জোগান খুব বেশি নেই বলে দর পড়লেও তা নির্দিষ্ট জায়গায় আঠকে রয়েছে।’’ খুচরো ব্যবসায়ীদের আরও দাবি, এখন আলুর মান খারাপ হওয়ায় ঝাড়াই-বাছাই করে তাঁদের বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক সময় বস্তার বেশির ভাগ আলুই খারাপ বেরিয়ে পড়ছে। তাই লোকসান ঠেকাতে তাঁরাও দাম কমাতে পারছেন না। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আলুর দর বেশি যাচ্ছে এমন কোনও অভিযোগ এখন শোনা যায়নি।”