ধর্মঘট ঘিরে উদ্বেগ, তৈরি পুলিশও

দুই জেলার পুলিশ প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়েছে, জোর করে ধর্মঘট করানো যাবে না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় খুব সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে পথে বেসরকারি বাস কেমন নামবে, তা নিয়ে মঙ্গলবারও সংশয় কাটেনি। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৫৩
Share:

ঝালদার পথে ধর্মঘটের সমর্থনে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বিরোধীদের বড় অংশই ধর্মঘটে অনড়। অন্য দিকে জনজীবনে ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে দেবে না বলে ডাক দিয়েছে তৃণমূল। পুলিশ ও প্রশাসনও জানিয়ে দিয়েছে, ধর্মঘট করাতে জোর খাটানো হলে তা রোখা হবে। ধর্মঘটের আগের দিন মঙ্গলবার এমনই টানটান পরিস্থিতি দেখা গেল পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়।

Advertisement

রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, ধর্মঘটে মানুষের রুটি-রুজির ক্ষতি হয়। তবে নতুন নাগরিকত্ব আইন-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রতিবাদে এবং একাধিক দাবিতে সর্বভারতীয় স্তরের ১০টি শ্রমিক সংগঠন-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বুধবার ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ধর্মঘট হতে দেওয়া যাবে না। ওই দিনে সরকারি অফিসগুলিতেও হাজির থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

দুই জেলার পুলিশ প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়েছে, জোর করে ধর্মঘট করানো যাবে না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় খুব সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে পথে বেসরকারি বাস কেমন নামবে, তা নিয়ে মঙ্গলবারও সংশয় কাটেনি।

Advertisement

বাঁকুড়া বাসকর্মীদের সংগঠন মোটর মজদুর সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকেরা নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই লড়াই করছেন। তাই আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বাস কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না।” অন্য দিকে, জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভানেত্রী অলকা সেন মজুমদারের দাবি, “মানুষ ধর্মঘটের বদলে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পক্ষে। বাস, কারখানা সবই স্বাভাবিক থাকবে।’’

বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “বাসকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের বাস চালাতে বলা হয়েছে। আশা করি, জেলায় পরিবহণ ব্যবস্থা সচল থাকবে।’’ যদিও খুব একটা আশাবাদী নয় দুই জেলার বাস মালিক সমিতি। ‘বাঁকুড়া জেলা বাসমালিক কল্যাণ সমিতি’-র সহ-সভাপতি অঞ্জন মিত্র বলেন, “বাসকর্মীরা কাজে যোগ দিলেই বাস চলবে। আমরা সকলকেই কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছি। এখন দেখার আমাদের অনুরোধে কর্মীরা কতটা সাড়া দেন।”

‘পুরুলিয়া জেলা বাসমালিক সমিতি’র সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত জানান, বাসের চালক ও কর্মীরা কাজে না এলে বাস চালানো তাঁদের পক্ষে পরিবহণ সচল রাখা সম্ভব নয়।

বাঁকুড়া শহর ব্যবসায়ী সমিতি ও বাঁকুড়া চকবাজার উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক করুণাময় চঁদ বলেন, “ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ব্যবসায়ীই দোকান বন্ধ রাখতে চাইছেন। যে, যাঁর মতো সিদ্ধান্ত নেবেন।”

ধর্মঘটের সমর্থনকারীরা অনড়। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, বুধবার সকাল থেকেই প্রতিটি ব্লক সদরে বড় মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। সেই মতো প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে দলের প্রতিটি এরিয়া কমিটিকে। সূত্রের খবর, নতুন নাগরিকত্ব আইনের মতো বহুচর্চিত বিষয় এ বার ধর্মঘটে যুক্ত হওয়ায় অনেকেরই সমর্থন পাওয়া যাবে আশা করে বামকর্মীরা এ বার পথে ঝাঁপাতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে ট্রেন, গাড়ি বন্ধ করার চেষ্টাও হতে পারে বলে ইঙ্গিতও দিয়েছেন দলের কিছু নেতা। পুরুলিয়ার এক জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের কথায়, ‘‘প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ধর্মঘট সফল করার জন্য অতীতে যা করা হত, এ বার সেটাই করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীদের।”

সিটুর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সৌমেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে আমরা ধর্মঘটের সমর্থনে গিয়েছি। তাঁদের সাড়া পেয়েছি।’’ সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের কথায়, ‘‘ধর্মঘটের দিনে ছুটির আমেজ নিয়ে আমাদের কর্মীরা ঘরে বসে থাকবেন না। সকলেই মাঠে ময়দানে নামবেন।”

অন্য দিকে, বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বুধবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় আমাদের দলীয় কর্মসূচি আছে। তাতে ধর্মঘটের সমর্থকেরা বাধা দিলে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে দায় আমরা নেব না।”

তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, কোথাও কোথাও রাস্তাতেও নামতে পারেন তাঁদের দলের কর্মীরা। দলের পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি তথা জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘যে দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে তার প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন থাকলেও, বন্‌ধের কর্মনাশা রাজনীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল। আমরা চাইছি, জনজীবন সচল ও স্বাভাবিক থাকুক।” একই মত তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যালেরও। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মঘটের বিরোধিতায় কী কর্মসূচি নেওয়া হবে, তা পরে ঠিক করা হবে।’’

প্রস্তুত পুলিশও। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘ধর্মঘটের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল, সভা করতে পারেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মঘট সফল করার আবেদনও জানাতে পারেন। কিন্তু জোর খাটিয়ে ধর্মঘট করাতে গেলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও-ও বলেন, ‘‘সর্বত্র নজরদারি চলবে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement