বাতাসে লু, কাজে ছুটি আইনজীবীদের

মামলাই করা হল না

পুরুলিয়ার দুই আদালতেই কর্মবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছেন আইনজীবীরা। ফলে, টানা কাজ বন্ধ থাকছে পুরুলিয়া আদালত এবং রঘুনাথপুর আদালতে। পুরুলিয়ায় প্রথমে ২৭মে থেকে তিন দিনের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছিল বার অ্যাসোসিয়শন। পরে তা বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে গত ২৫ মে থেকে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। তা চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। টানা কর্মবিরতির জেরে হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০০:৫২
Share:

পুরুলিয়ার দুই আদালতেই কর্মবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছেন আইনজীবীরা। ফলে, টানা কাজ বন্ধ থাকছে পুরুলিয়া আদালত এবং রঘুনাথপুর আদালতে।
পুরুলিয়ায় প্রথমে ২৭মে থেকে তিন দিনের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছিল বার অ্যাসোসিয়শন। পরে তা বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে গত ২৫ মে থেকে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। তা চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। টানা কর্মবিরতির জেরে হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। বাঁকুড়ার মতো এ ক্ষেত্রেও দু’টি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, দাবদাহের কারণে আদালতে বসে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই সর্বসম্মত ভাবে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা।
কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের? আদ্রার সেবানগর এলাকা থেকে প্রকাশ্যে মদ্যপান করে এলাকার অশান্তির অভিযোগ অতীতের একটি ঘটনায় তিন যুবকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। পুলিশ শনিবার রাতে তাঁদের গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ২৯০ ধারায় মামলা রুজু করেছে আদ্রার পুলিশ। সাধারণত এই ধারায় মামলা করে ধৃতদের আদালতে তোলা হলে জামিন পেয়ে যায় সকলেই। রবিবার ওই তিন জনকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। কিন্তু আইনজীবীরা জামিনের সওয়াল না করায় ও জামিনদার না মেলায় তিনজনকেই জেলে যেতে হয়েছে। আবার আদ্রারই জ্যোতি মোড়ের বাসিন্দা দুই যুবককে মারপিটের অভিযোগে গ্রেফতার করে গত ১৯ মে রঘুনাথপুর আদালতে তোলে পুলিশ। প্রথমবার তাঁদের জেল হেফাজত হয়। পরের বার আদালতে তোলা হলে তাঁদের জামিন পাওয়ার কথা বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরাই। অথচ ২ জুন আইনজীবী না থাকায় আদালত থেকে জামিন পাননি ওই দুই যুবক। ফের জেলেই ঠাঁই হয়েছে তাঁদের।

Advertisement

আবার সোমবার আদালতে এসেও চেক বাউন্সের একটি ঘটনায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেননি রঘুনাথপুরের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা সোমনাথ মাজি। চড়া রোদে সাইকেলে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ উজিয়ে আদালতে এসেছিলেন তিনি। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘পরিচিত একজনকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলাম। তিনি উল্টে একটি ব্যাঙ্কের চেক দেন। ভাঙাতে গিয়ে দেখি অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকটি বাউন্স করেছে। মামলা দায়ের করতে এসেছিলাম। কিন্তু কর্মবিরতির জন্য কোনও উকিল মামলা করতে রাজি হয়নি। অথচ সময় মতো আদালতে অভিযোগ না জানালে টাকাও ফেরত পাব না। বড্ড সমস্যায় পড়ে গেছি।’’ একই ছবি পুরুলিয়া আদালতে। সুদূর বাঘমুন্ডি থেকে মামলার কাজে আদালতে এসেছিলেন রবি মাঝি। আইনজীবীদের দেখা না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। একই অভিজ্ঞতা পুঞ্চার লাখরা গ্রামের শঙ্কর বাউরি, বরাবাজারের নরোত্তম মাহাতোদের।

পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক তাপস মাহাতো বলেন, ‘‘এটা ঠিক আমাদের কর্মবিরতির জেরে কিছু বিচারপ্রার্থী সমস্যায় পড়ছেন। কিন্তু এই প্রচণ্ড গরমে আইনজীবীদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের ওই পদক্ষেপ করতে হয়েছে।’’ একই মত রঘুনাথপুর বার অ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক অলোককুমার নন্দীর। আদালতে পরিকাঠামোর অভাবে গরমের সময়ে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না বলেও দাবি করেছেন দু’টি আদালতেরই আইনজীবীরা। তাপসবাবু বলেন, ‘‘পুরুলিয়া আদালতে ২২৫ জন আইনজীবী রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অনেককেই গাছের তলায় ও আদালতের বারান্দায় বসতে হয়। এই গরমে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়।’’ রঘুনাথপুর বার অ্যাসোসিয়শনের কার্যকরী কোষাধ্যক্ষ প্রণব দেওঘরিয়া বা সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মিশ্র জানান, এখানে ৮৮ জন আইনজীবী রয়েছেন। কিন্তু, বসার ঘরে ১৫-২০ জনের জায়গা হয়। বাকিদের খোলা জায়গায় বসে কাজ করতে হচ্ছে। গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আদালতে পানীয় জলের সমস্যা, সাক্ষীদের বসার বন্দোবস্ত নেই বলেও অভিযোগ দুই বার অ্যাসোসিয়েশনের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement