জলের অপেক্ষায় সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
জেলার সদর শহরে পুর এলাকার জল সমস্যা নতুন কিছু নয়। সেই সমস্যা যে এখনও কিছু জায়গায় অব্যাহত রয়েছে, তা কিছুদিন আগে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়েই টের পেয়েছিলেন শাসক দল তৃণমূলের নেতারা। শহরবাসীর একাংশের দাবি, শহরের জল সমস্যা অনেকটা মিটে গেলেও এখনও শহরের ২, ৩, ১০, ১৭ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকায় জল সমস্যা অব্যাহত রয়েছে। আগামী পুরভোটের আগে সেই সমস্যা সমাধান হয় কি না সেই দিকেই তাকিয়ে বাসিন্দারা।
গত পুরভোটেও শহরের জল সমস্যা ছিল বিরোধীদের মূল অস্ত্র। বিরোধীদের জল সঙ্কট নিয়ে আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য শহরে এসে লিফলেট বিলি করেছিলেন খোদ ফিরহাদ হাকিম। লিফলেটে বলা হয়েছিল, নতুন জল প্রকল্পের মাধ্যমে এই জলকষ্ট দুর করার কথা। এরপরেই ফের সিউড়ি পুরসভা দখল করেছিল তৃণমূল। তারপরেই শহরের জলকষ্ট দূরীকরণের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেই প্রকল্পের কাজ পেয়েছিল পুর কারিগরি দফতর। সেই কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। উদ্বোধন হয়েছে নতুন জল প্রকল্পের। কিন্তু জল সমস্যা সমাধান সম্পূর্ণভাবে হয়নি বলে অভিযোগ।
পুরভোটের পর গত লোকসভা ভোটের আগেও জল সমস্যা নিয়ে হাজারো অভিযোগ তুলেছিলেন শহরের বেশকিছু ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। লোকসভা ভোটের আগে সিউড়ির সমন্বয়পল্লিতে ‘জল নেই ভোট নেই’ লেখা পোস্টারও পড়েছিল। জল সমস্যার কারণে হাটজনবাজার এলাকায় ভোট প্রচারে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়। তাছাড়া একাধিকবার পুরসভায় বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শহরের বেশকিছু ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এমনকি গত লোকসভা ভোটে সিউড়ি পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল, যার অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়েছিল এই জল সমস্যাকে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের নেতাদের কাছেও শহরবাসীর এই ক্ষোভ অজানা নয়। শহরবাসীর মন জয় করতে জল সমস্যা যে মেটাতে হবে তা আন্দাজ করে গত বছর জুলাই মাসে সিউড়ির রবীন্দ্রসদন হলে তৃণমূলের একটি কর্মসূচিতে এসে ওই সমস্যার কারণে শহরবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপরেই কেএমডিএ, কলকাতা পুরসভা এবং পুর কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল এসে সিউড়ি পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুর কারিগরী দফতরের যুগ্ম সচিব কৌশিক সেন। ওই বৈঠকে মূলত শহরের জল ছবির হালককিকত নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু তারপরেও সমস্যা সেই রকমই আছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের।
এক কর্তার কথায়, ‘‘নতুন জল প্রকল্পের মাধ্যমে যে যে ওয়ার্ডে জল দেওয়ার কথা ছিল, সেই সেই ওয়ার্ডগুলি সঙ্গে আরও বেশ কিছু ওয়ার্ডে জল দিতে গিয়েই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া অবৈধ জলের কানেকশনের জন্যও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’’ অন্যদিকে জল সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে সিউড়ি
পুরসভার পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ দল যেভাবে পরিকল্পনা দিয়েছিল সেই মত মাস দু’য়েক আগে একটি ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট আমরা জমা দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় আমি নিজেই হতাশ।’’