এই পোস্টেই চর্চা। নিজস্ব চিত্র
জেল থেকেই দল চালাচ্ছেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল,দিন কয়েক আগে কার্যত এমনই দাবি করেছিলেন তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। এই আবহে এ বার নাম না-করে ‘যাঁরা পদ পাওয়ার জন্য লাফালাফি করছেন’, এমন কিছু দলীয় নেতার উদ্দেশে অনুব্রতের ছবি দিয়ে সমাজমাধ্যমে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ পোস্ট করলেন জেলা সভাপতি অনুব্রতের অনুগামীরা।
সেই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘এক জন টিভি সাংবাদিক অনুব্রত মণ্ডলকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি চাইলে এমপি বা এমএলএ হতে পারেন, হচ্ছেন না কেন? তার উত্তরের অনুব্রতবাবু বলেছিলেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়াতে কোনও পদ লাগে না’।”
এই পোস্ট ঘিরেই জেলা তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। পোস্টে কারও না নেই ঠিকই। কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে, পদের ‘লোভ’ কার বা কাদের? কী বোঝানো হচ্ছে এই পোস্ট করে?
প্রসঙ্গত, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে বীরভূমে দলের কাজ দেখছে একটি কোর কমিটি। জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে সাত করে দেন। সেখানে জেলার দুই সাংসদের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয় নানর ব্লক তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি কাজল শেখকে। যিনি বরাবরই অনুব্রত-বিরোধী বলে জেলার রাজনীতিতে পরিচিত। কাজলকে কোর কমিটিতে কেন আনা হল, তা নিয়ে দলের অন্তরে শুরু হয় গুঞ্জন। দলের একাংশ বিশেষ করে পুরনো কেষ্ট-অনুগামীরা কিছু ক্ষুব্ধ হন বলেও তৃণমূলের বিশ্বস্ত সূত্রের খবর।
এর পরেই দিন কয়েক আগে বোলপুরে দলীয় বৈঠক চলাকালীন কোর কমিটি থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হোক বলে বৈঠকে জানান কাজল। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, কিছুজন চক্রান্ত করে কোর কমিটি বৈঠক ডাকছেন না, যাতে তিনি কাজ না করতে পারেন। মাঝপথে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায় কাজলকে। ঠিক তার পরের দিন নানুরে কাজল বলে বসেন,জেলবন্দি অনুব্রতের সঙ্গে ফোনে কথা হয় জেলা সভাধিপতি তথা কোর কমিটির অহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর। কাজলের এই মন্তব্যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শাসকদলকে।গত কয়েক দিন ধরে কাজলের কার্যকলাপ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেচেন বলেও সূত্রের খবর।
এই পরিস্থিতিতে অনুব্রত-অনুগামীদের ওই পোস্ট জেলা সভাপতির বিরোধী কাজল শেখকে উদ্দেশ করেই করা হয়েছে হলে দলের একাংশের মত। যদিও কাজলকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ দিন বলেন, ‘‘আমিও তো অনুব্রত অনুগামী।’’ এর পরেই তিনি ফোন কেটে দেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক অনুব্রত-অনুগামীর ক্ষোভ, “এখন দল যে-ভাবে চলছে, সেটা আদর্শ নয়। কিছু জন দলের কোর কমিটিতে জায়গা পেয়ে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন। পদ পাওয়ার জন্য যা যা করার তাই করছেন, কিন্তু কেষ্টদা কখনও পদের লোভে দল করেননি। এর প্রভাবও পঞ্চায়েত ভোটে পড়তে পারে। সেটাই আমরা পোস্টে বলতে চেয়েছি।’’ যদিও এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যার যে-রকম অভিরুচি, সে সেরকম কাজ করবে। এতে আমার কিছু বলার নেই। তবে এই ধরনের পোস্টে দলে কোনও প্রভাব পড়বে না, একটুকুবলতে পারি।”