বন্যায় ভেসে যাওয়ার পর এমনই অবস্থা হয় গ্রামের। ফাইল চিত্র।
মাস দু'য়েক আগেও ভগ্নস্তূপ হয়ে পড়েছিল গোটা গ্রাম। সরকারি সহায়তায় গ্রামবাসীরাই জোর কদমে নেমে পড়েছেন গ্রাম পুনর্নির্মাণের কাজে। দ্রুত সেজে উঠছে নানুরের সুন্দরপুর গ্রাম। গ্রামবাসীদের মধ্যেও বইছে খুশির হাওয়া।
গত অক্টোবর মাসে অজয় নদের বাঁধ ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ওই গ্রাম। নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন শতাধিক পরিবার। ঠাঁই হয় নদের পাড়ে ত্রিপলের তাঁবুতে। প্রথম দিকে প্রশাসন গ্রাম পুনর্নির্মাণের কথা ঘোষণা করে। পরে অবশ্য গ্রামবাসীদেরই বাড়ি তৈরির অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের বন্দোবস্তের দায়িত্ব নেয় প্রশাসন। সেই মতো ৮৮ টি পরিবারের নামে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দ হয়। তারমধ্যে দু'দফায় ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে পরিবারগুলিকে। সেই টাকায় পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে গ্রাম পুনর্নির্মাণের কাজ।
গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় মাঝি, তাঁর বাবা নিমাই মাঝি এবং ভাগ্নে বিশ্বজিৎ মাঝি— তিন জনই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। একসঙ্গে চার কামরার ইটের গাঁথনি দেওয়া অ্যাসবেস্টাসের ছাউনি দেওয়া বাড়ি করেছেন। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। হৃদয় বলেন, ‘‘একসঙ্গে না করলে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব হত না। সব মিলিয়ে আমাদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১২ জন। বন্যার আগে বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। এখন ৪টি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।’’
একই অবস্থা আরেক বাসিন্দা সঞ্জয় ঘোষেরও। বন্যার আগে তাঁদের দোতলা পাকা বাড়ি ছিল। এখন অনুদানের টাকায় দু’কামরার অ্যাসবেস্টাসের ছাউনি দেওয়া দোচালা ঘর করেছেন। তাতেই দুই ছেলে সহ ৪ জন রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্যার আগে থেকেই বড় ছেলের বিয়ের কথা চলছিল। বাড়িতে স্থানাভাবের কারণে বিয়ে দিতে পারছি না।’’
অনেকে পারলেও এখনও বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি মানিক মাঝি, রেণুপদ মাঝিরা। বুধবারও তাঁদের বাড়ি তৈরির কাজ করতে দেখা গেল। তাঁরা জানান, দু'কামরার অ্যাসবেস্টাসের ছাউনির বাড়ি তৈরি করতে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ পড়ে যাবে। তাঁরা বললেন, ‘‘দু'দফায় ১ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছি। আর ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। তাই ধারদেনার পাশাপাশি নিজেরা শ্রম দিয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছি।’’
ঘর গৃহস্থালির পাশাপাশি ভেসে গিয়েছিল গবাদি পশুও। সেই ক্ষতিও এখনও সামাল দিয়ে উঠতে পারেননি গ্রামবাসীরা। হৃদয় মাঝি, সঞ্জয় মাঝিরা জানালেন, হালের বলদ-সহ ৪ টি করে গরু এবং ৫টি করে ছাগল ভেসে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘একার পক্ষে এক জোড়া বলদ কেনার সামর্থ্য নেই। তাই আমরা একটা করে কিনেছি। পালা করে একে অন্যেরটা নিয়ে চাষ করছি।’’
অনেকের আবার চাষ করা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সঞ্জয় ঘোষ, নিমাই মাঝিরা জানিয়েছেন, বন্যায় তাঁদের জমি বালি আর ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যায়। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা যতটা পেরেছি পরিষ্কার করেছি। বাকিটা এ বার আর চাষ করাই যাবে না।’’
গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে গ্রামের রাস্তা নিয়েও। বন্যায় ঢালাই রাস্তা ভেঙেচুরে মাটি চাপা পড়ে যায়। বৃষ্টি হলে সেই রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্প অনুযায়ীই টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যেই বাড়ি করতে হবে। নিজেদের ইচ্ছে মতো করতে চাইলে নিজস্ব টাকা যোগ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘শীঘ্রই উপভোক্তারা তৃতীয় দফার টাকা পেয়ে যাবেন। ইতিমধ্যে জমি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেউ লিখিত ভাবে জানালে বিবেচনা করে দেখা হবে।’’ গ্রাম পুনর্নির্মাণের পর পানীয় জল, বিদ্যুতের পাশাপাশি রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।