অস্ত্রোপচারে বাদ দেওয়া হয় এই টিউমার। নিজস্ব চিত্র।
ডান হাতের বাহুর সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১২ কেজি ওজনের টিউমার। এমন অবস্থায় লজ্জায়, অস্বস্তিতে বাড়ি থেকে বেরোতেই পারতেন না নলহাটি থানার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তা হাফিজুর। অস্ত্রোপচার করতে চাইলেও কলকাতা, বর্ধমান থেকে ফিরতে হয় তাঁকে। মঙ্গলবার রামপুরহাট মেডিক্যালেই সেই বিরাট টিউমারের সফল অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসকেরা।
হাতে টিউমার নিয়ে বাড়িতে বসে থাকা, কোনও কাজ করা, বা খাওয়া-শোওয়ার সময়ও খুব অসুবিধে হত পঞ্চাশোর্ধ্ব হাফিজুরের। সম্প্রতি টিউমারটি আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নীচের অংশে পচন ধরে যায়। পেশায় চাষি হাফিজুর টিউমারটি অস্ত্রোপচার করার জন্য কলকাতার বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কেউই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চাননি বলে দাবি তাঁর।
সম্প্রতি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের শল্য বিভাগের বহির্বিভাগে তাঁকে দেখার পরে শল্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদাক্কাস আলি টিউমারটির অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো মঙ্গলবার দুপুরে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং সাফল্য পান চিকিৎসকরা। সাদাক্কাস-সহ শল্য বিভাগের দুই চিকিৎসক বিবেক কুমার, অভিষেক ঘোষ সহযোগী হিসেবে ছিলেন। এ ছাড়া অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ সফিউল্লা এবং আনিসুল রহমান।
সাদাক্কাস বলেন, ‘‘ওই টিউমারটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে প্লেক্সিফর্ম নিউরোফাইব্রোমা। এটি একটা স্নায়ুর টিউমার। তা জন্মগত হতেও পারে, পরবর্তী কালেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে রোগী প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর ধরে এই টিউমার নিয়ে অসুবিধায় ভুগছিলেন।’’ তিনি জানান, তাঁরাও অস্ত্রোপচার করা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তবে রোগীর অবস্থা দেখে অন্য সহকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের আগে যেখানে টিউমারটি আছে সেখানে শিরা বা ধমনীর সংযোগ আছে কি না পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়। এ জন্য বাইরে থেকে এমআরআই করা হয়েছে।
হাসপাতালের শল্য বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেকেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ভয়ে অস্ত্রোপচার করতে চান না। এমন কঠিন অস্ত্রোপচার করে সাফল্য পেয়ে চিকিৎসকরা খুশি।