নম্বর পেতে স্কুলে জমা প্লাস্টিক 

স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে ‘প্রোজেক্টের’ জন্য যে নম্বর দেওয়া হয় (যেটা স্কুলের হাতে থাকে), সেই নম্বর পেতে হলে এমনই করতে হবে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৩
Share:

প্রয়াস: জমা নেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিক। (ডান দিকে) সেই ফর্ম। নিজস্ব চিত্র

অসমের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হলে পড়ুয়াদের স্কুল-ফি হিসেবে দিতে হবে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক— এমনই খবর সম্প্রতি এসেছিল শিরোনামে।

Advertisement

প্লাস্টিক নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা গড়তে অনেকটা অসমের সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পথেই এগোতে চাইছে দুবরাজপুরের চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়। পরীক্ষায় নম্বর পেতে পড়ুয়াদের করতে হচ্ছে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক জমা দেওয়ার কাজই।

স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে ‘প্রোজেক্টের’ জন্য যে নম্বর দেওয়া হয় (যেটা স্কুলের হাতে থাকে), সেই নম্বর পেতে হলে এমনই করতে হবে। জীবনবিজ্ঞানের ‘প্রোজেক্ট’ হিসেবে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতনতা বৃদ্ধিকে বিষয় করা হয়েছে। স্কুল সূত্রে খবর, ২৪৩ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সপ্তাহে এক দিন স্কুলে জমা দিতে হবে বর্জিত প্লাস্টিক। পাশাপাশি কেন প্লাস্টিক পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক তা নিয়ে প্রত্যেক পড়ুয়ার পাঁচ পড়শিকে সচেতন করতে হবে। ওই কর্মসূচি শুরু হয়েছে মাসখানেক আগে।

Advertisement

গাঁধী জয়ন্তীতে বুধবার থেকে দেশে ‘সিঙ্গল ইউজ’ প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাপ, পানীয়ের স্ট্র বর্জনের ডাক দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ওই সমস্ত সামগ্রী উৎপাদন, ব্যবহার ও আমদানি প্রক্রিয়া। সেই সময় বীরভূমের একটি স্কুলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মহকুমাশাসক (সিউড়ি) রাজীব মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। সে জন্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ বিধি চালু হয়েছে। সেই আবহে ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’

স্কুলের শিক্ষকেরা বলছেন— ‘প্লাস্টিক-দূষণ এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম চিন্তার বিষয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণের শিকার সারা বিশ্ব। বৃষ্টির জলে নদী-নালায় বয়ে প্লাস্টিক জমা হচ্ছে সমুদ্রে। যার জেরে অসংখ্য জলজ প্রাণীর মৃত্যুর পাশাপাশি মানুষের খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে। সে জন্যই এমন ভাবনা।’

জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক তথা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদার বলছেন, ‘‘যে বস্তু নিয়ে বি‌শ্বে এত সমস্যা, তা নিয়ে কেন পড়ুয়ারা সচেতন হবে না! পরিবারে বাচ্চারা সচেতন হলেই সচেতন হয় গোটা পরিবারই।’’

ঠিক কী কর্মসূচি চলছে স্কুলে?

স্কুল সূত্রে খবর, প্রত্যেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে একটি করে ছাপানো ফর্ম দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা, এক জন পড়ুয়াকে প্রোজেক্টের জন্য ১০ দিন ধরে বর্জিত প্লাস্টিক স্কুলে এসে জমা দিতে হবে। সেই তালিকায় রয়েছে, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, বিস্কুট বা অন্যান্য খাদ্যবস্তুর প্যাকেট, মশলাজাত দ্রব্য, জামাকাপড়ের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের প্যাকেট, দুধের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, কাপ। প্রথমে স্কুল চত্বর, তার পরে বাড়ি ও সংলগ্ন এলাকা থেকেও একেক বারে কমপক্ষে ১৫টি করে বর্জিত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে স্কুলে। সেগুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নষ্ট করবে স্কুল। প্রত্যেক পড়ুয়া যে পাঁচ পড়শিকে সচেতন করবে, তাঁদের প্রত্যেকের সই সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্লাস্টিকের ব্যবহার ততক্ষণ কমবে না যতক্ষণ না মানুষ সচেতন হচ্ছে। পড়ুয়াদের মধ্যে সেই বীজই বোপণের চেষ্টা চলছে।

পড়াশোনার ফাঁকে এমন প্রোজেক্টের কাজে খুশি পড়ুয়ারা। তারা বলছে, ‘‘পরীক্ষার নম্বর পেতে এই ব্যবস্থায় প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement