নোট বদলের ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। তাঁদের কাজ এখন জরুরি পরিষেবা। অন্য দিকে আরও এক জরুরি পরিষেবা সামাল দেন সৌম্যদীপরা। সৌম্যদীপ ঘোষ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার। হাসপাতালের ডিউটি সামলে ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ফুরসৎ পাচ্ছেন না তিনি। অল্প কিছু খুচরো রয়েছে হাতে। টেনেটুনে কোনও মতে তাই দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলার বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরে থেকে পড়তে আসা পড়ুয়ারা নোট বাতিলের জেরে সমস্যায় পড়েছেন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অনুরাগ মণ্ডল বলেন, ‘‘এটিএম বন্ধ। ব্যাঙ্কের লাইনে সারাদিন দাঁড়াতেও পারছি না। মেসের খাওয়ার ভরসায় প্রায় খালি হাতেই দিন কাটছে।’’ পুরুলিয়া নিস্তারিণী কলেজের ছাত্রীনিবাসের আবাসিক নেহা মাহাতো, তিয়াসা কর, নিবেদিতা গুপ্ত, পূজা সিংহরা জানান, হাতের খুচরো এই ক’দিনে শেষ। প্রতি মাসের দশ তারিখের মধ্যে তাঁদের এগারোশো টাকা মেস চার্জ দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সেটাও দিতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, কলেজে নিয়মকানুনের কড়াকড়ি। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে যে টাকা ভাঙিয়ে আনবেন, তার জো নেই। ছাত্রীনিবাসের সুপার মালবিকা রায় প্রামাণিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন দোকানে হস্টেলের খাতা রয়েছে। সারা মাস সেখান থেকে বাজার আনা হয়। মেস চার্জ না পাওয়ায় সেই ধার শোধ করা যাচ্ছে না। অবশ্য সবাই কমবেশি সমস্যাটা বুঝছেন।’’ একই ভাবে সমস্যায় পড়েছেন সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসের আবাসিকেরাও। ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী বাঁকুড়ার কোতুলপুরের সুস্মিতা ঘোষ জানান, হস্টেল ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাশ কাউন্টারে তাঁদের টাকা জমা দিতে হয়। প্রথমে আপত্তি করলেও তাঁদের সমস্যার কথা বুঝে সেখানে পাঁচশো টাকার নোট জমা নেওয়া হয়েছে।
বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সুমন পাণ্ডে শহরের খ্রিস্টানডাঙা এলাকার একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করেন। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মাথায় বাজ পড়েছে তাঁর। সুমন জানায়, কলেজে পড়ার পাশাপাশি জয়েন্টে বসার জন্যও আলাদা ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। কলেজের ক্লাস সেরে দিনভর মোট পাঁচটি কোচিং সেন্টারে ছুটতে হয় তাঁকে। ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানো হয়ে উঠছে না। এলাকারই এক ব্যবসায়ীর থেকে ৮০ টাকা বাট্টা দিয়ে ৫০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে সুমন পেয়েছে ৪২০ টাকা। সেই টাকাতেই আপাতত দিন গুজরান হচ্ছে তাঁর। একই ভাবে ১০০০ টাকার একটি নোট ভাঙাতে ১০০ টাকা বাট্টা দিতে হয়েছে সম্মিলনী কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বিট্টু মণ্ডলকেও। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা অবশ্য বলেন, ‘‘নোট ভাঙানোর জন্য টাকা নেওয়ার কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। পুরুলিয়া জগন্নাথ কিশোর কলেজের আবাসিক ছাত্রী নন্দিতা মাহাতো রবিবারই হস্টেল ছেড়েছেন খুচরো-সঙ্কটে। রবিবার সকালেই কলকাতার মেস ছেড়ে পুরুলিয়ায় চলে এসেছেন কলকাতার একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী বসন্ত মাহাতোও।
তবে জেলার এক ব্যাঙ্ক কর্মী বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেরই জীবন যাপনের ছন্দ কমবেশি বিপর্যস্ত হয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্মীদের ছুটির দিনে কাজ করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকেও কাজ ফেলে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’’ পড়ুয়াদের এই সমস্যা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখতে নারাজ নোট বাতিলের বিপত্তি সামাল দিতে থাকা ব্যাঙ্ক কর্মীদের একটা বড় অংশ।