আটকে: তখনও ঘেরাও হয়ে দফতরে বসে কর্মকর্তারা। নিজস্ব চিত্র
বহু টানাপড়েনের পরে ৩৬ ঘণ্টার মাথায় উঠে গেল ঘেরাও-বিক্ষোভ। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্বভারতীর ছাত্র পরিচালকের দফতরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শারীরশিক্ষা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। রাত ন’টার দিকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপনকুমার দত্ত, বিনয়ভবনের অধিকর্তা সবুজকলি সেন-সহ অন্য আধিকারিকেরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। আশ্বাস দেন, সাত দিনের মধ্যে সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপাচার্যের আশ্বাসে ঘেরাও-মুক্ত হন অধিকারিকেরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, গত বছরের মতো এ বারও ১০৮ জন পড়ুয়াকে হস্টেল দিতে হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে শারীরশিক্ষা বিভাগের পড়ুয়াদের প্রথমে ৩০ জনকে ছাত্রাবাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা মানেনি ছাত্রছাত্রীরা। দু’পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় মঙ্গলবার সারা রাত এবং বুধবার রাত দশটা পর্যন্ত তালাবন্দি অবস্থায় থাকতে হয় ছাত্র পরিচালক তথা ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অমিত হাজরা থেকে শুরু করে উপ কর্মসচিব তন্ময় নাগ, উপ ছাত্র পরিচালক মঞ্জুশ্রী ভট্টাচার্য-সহ অন্য কর্মীদের।
রাতভর ঘেরাও থেকেও অবশ্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। কর্মসচিব বলেছিলেন, “একটা বিভাগের জন্য এতগুলো হস্টেল দেওয়া সম্ভব নয়। গত বছর পর্যন্ত জায়গা ছিল, তাই দেওয়া হয়েছে। এ বার সংস্কারের জন্য হস্টেল কম আছে। অন্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে।”
বিশ্বভারতীর শারীরশিক্ষা বিভাগে মোট ৩৪০ জন পড়ুয়া রয়েছে। তার মধ্যে স্নাতকস্তরে চল্লিশটি করে মোট ১২০ জন, বিপিএড বিভাগের দু’টি বর্ষের ৫০টি করে ১০০ জন এবং এমপিএডের দু’টি বর্ষে ৪০টি করে মোট ৮০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। বাকি ৪০ জন গবেষক ছাত্রছাত্রী। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের দাবি, গত বছর পর্যন্ত শারীরশিক্ষা বিভাগে ১০৮ জন পড়ুয়াকে ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। শান্তিশ্রী ছাত্রাবাস, বিনয়ভবনের নীচু বাংলো ছাত্রাবাস সহ বিভাগের নিজস্ব ছাত্রাবাসে বিভাগের পড়ুয়ারা থাকত।
কিন্তু, চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তির পরে এক মাস কেটে গেলেও কোনও পড়ুয়াকে ছাত্রাবাস দেওয়া হয়নি। অথচ, অন্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রাবাস দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন স্নাতকস্তরে সদ্য ভর্তি হওয়া বাইরের পড়ুয়ারা। এই পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো একই সংখ্যক ছাত্রাবাস পেতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্বভারতীর ছাত্র পরিচালকের দফতরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শারীরশিক্ষা বিভাগের পড়ুয়াদের একাংশ। পরে উপ কর্মসচিব তন্ময় নাগ, উপ ছাত্র পরিচালক মঞ্জুশ্রী ভট্টাচার্য-সহ কর্মীদের দফতরের মধ্যেই তালাবন্দি করে বিক্ষোভ জারি রাখে পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার বিকেলে বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে দফতরে আসেন ছাত্র পরিচালক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব অমিত হাজরা। ৩০ জন পড়ুয়াকে ছাত্রাবাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে নিজেদের দাবিতে অনড় পড়ুয়ারা কর্মসচিবকেও দফতরেই তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ চালাতে থাকেন।
রাতভর ‘বন্দি’ থাকার পরে আসরে নামেন উপাচার্য স্বপনকুমার দত্ত, বিনয়ভবনের অধিকর্তা সবুজকলি সেন-সহ অন্য আধিকারিকেরা। আরও বেশি করে হস্টেল দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়।
বুধবার সকালে বিশ্বভারতীতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, দফতরের ভিতরে বসে রয়েছেন আধিকারিকরা। বাইরে নিরাপত্তারক্ষী ও বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা পাশাপাশি বসে রয়েছেন সেই মঙ্গলবারের মতোই। বিক্ষোভকারী ছাত্রদের মধ্যে অভিষেক ঘোষ, হাসিবুর শেখ বলেন, “আমাদের তিন বেলা ক্লাস করতে হয়। বাইরে থেকে এসে ক্লাস করব কী করে? তাই গত বছরের মতো এ বারও একই সংখ্যক হস্টেল দিতে হবে।’’ শেষে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে ঘেরাও ওঠে। সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সুরাহা না হলে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখছেন তারা।