অবতরণের পরে মোশারফ হোসেন। বুধবার বেঙ্গালুরুতে। —নিজস্ব চিত্র।
চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বীরভূম জেলার আরও এক কৃতী ভূমিপুত্র।
বুধ-সন্ধ্যায় চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের শেষে যখন করতালিতে মুখরিত বেঙ্গালুরুর ইসরোর অপারেশন সেন্টার, তখন সেই দলে দেখা গেল পাইকরের প্রত্যন্ত গ্রাম বিলাসপুরের মোশারফ হোসেনকেও। কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে ইসরোর বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে সিনিয়র প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কর্মরত মোশারফ চন্দ্রযান-৩-এর অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
চন্দ্রযান-৩ অবতরণ উপলক্ষে মোশারফকে বেঙ্গালুরুতে যেতে হয়েছে। তিনি এই অভিযানের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। মোশারফের দায়িত্বে রয়েছে ল্যান্ডার বিক্রমের বেশ কয়েকটি পে-লোড। যারা আগামী কয়েক দিন ধরে চাঁদের বুক থেকে নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করবে। চন্দ্রযান-২-এও একই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সফল অবতরণের পরের দিন সকাল থেকে কাজে ব্যস্ত মোশারফ। বৃহস্পতিবার ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল। অবতরণের সাফল্যে আমরা সকলে খুশি।’’
বছর ৫০-এর মোশারফের পড়াশোনা শুরু বিলাসপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাইকর হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরে হুগলির পাণ্ডয়া শশিভূষণ হাই স্কুল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স করে বিশ্বভারতী থেকে এমএসসি পাশ করেন। পরে দিল্লি আইআইটি থেকে এম-টেক এবং পিএইচডি।
২০০৭ সাল থেকে তিরুঅনন্তপুরমে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে কাজে যোগ দেন। সেখানেই স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার সফ্ট ল্যান্ডিংয়ে ব্যর্থ হওয়ায় প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলেন। তিরুঅনন্তপুরম থেকে ফোনে স্ত্রী নুসরত বেগম বলেন, ‘‘চন্দ্রযান-২ ভেঙে পড়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিল। চন্দ্রযান-৩ সফল হবে কি না তা নিয়েও চিন্তায় ছিলেন। সাফল্য মিলতেই আমরা সকলে আনন্দে মেতে উঠেছিলাম। তবে এখনও ভীষণ চাপ আছে।’’
পাইকর থানার বিলাশপুরের গ্রামের বাড়িতে মোশারফের ভাই হুমায়ুন কবীর এবং অন্যান্য আত্মীয়েরা থাকেন। হুমায়ুন নলহাটি থানার আমাইপুর মিলনি হাইমাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক। হুমায়ুন বলেন, ‘‘দাদা দু’মাস আগে বাড়ি এসেছিলেন। বাড়ি এসে চন্দ্রযান-৩-এর অভিযানের কথা বলে গিয়েছিলেন। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল ভারত। দাদা অংশ ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।’’ পাইকর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস চট্টোপাধায় বলেন, ‘‘মোশারফের জন্য আমরা সকলেই গর্বিত।