stomach infection

পেটের রোগেই কি মৃত্যু, তদন্তে স্বাস্থ্য দফতর

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, পেটের রোগে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। এখন তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সে কারণেও শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৯
Share:

ওষুধ দিতে। পুরুলিয়া শহর রঘুনাথপুরের ডুমুরকোলায়। নিজস্ব চিত্র

ভরা গরমে পুরুলিয়া শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এক বালিকা-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করল পরিবার। তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি স্বাস্থ্য দফতর। ওই এলাকার মতোই রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ডুমুরকোলা গ্রামেও পেটের রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে দুই জায়গার প্রা ২৮ জন এ দিন বিকেল পর্যন্ত পুরুলিয়া মেডিক্যাল ও রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন গায়িত্রী পরামানিক (১০) ও মঙ্গলা পরামানিক (২০)। দু’জনেই ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাপিতপাড়ার বাসিন্দা। গায়িত্রীর মৃত্যু হয় বুধবার দুপুরে। মঙ্গলা মারা যান বৃহস্পতিবার সকালে। দু’জনকেই হাসপাতালে আনার পরে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘মৃত দু’জনই পেটের রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বার বার বমি ও পায়খানা করছিলেন। তবে শুধু পেটের রোগ, নাকি আরও অন্য কিছু কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তা স্বাস্থ্য দফতর খতিয়ে দেখছে।” পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণলকান্তি দে বলেন, ‘‘কী ভাবে ওই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, পেটের রোগে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। এখন তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সে কারণেও শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে পেটের রোগ ও তাপপ্রবাহ— দুই কারণ যোগ হলে আক্রান্তদের তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর ভয় থাকে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, পুরুলিয়ার নাপিতপাড়ায় পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭-৮টি পরিবার। তাদের মধ্যে ১১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে পুরুলিয়া মেডিক্যালে। সকালে ওই এলাকায় যায় পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দল। যান পুরপ্রধানও।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, আক্রান্তেরা পুরসভার পাইপলাইনের জল পান করেন। তাহলে শুধু ওই এলাকাতেই কেন কয়েকটি পরিবার আক্রান্ত হল? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা পানীয় জলের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সেটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’ তবে স্থানীয়দের দাবি, পানীয় জলের পাইপের পাশেই আবর্জনা জমে আছে। সেই নোংরা জলে মিশে থাকতে পারে। বিষয়টি পুরকর্মীরা খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান।

মৃত বালিকা গায়িত্রীর বাবা গৌতম পরামানিক সেলুনের দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়ে ঘনঘন বমি, পায়খানা করছে শুনে বাড়ি এসে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু হয়।’’ মঙ্গলা ভাড়া থাকতেন সুখেন মর্দ্যানার বাড়িতে। সুখেন জানাচ্ছেন বুধবার থেকেই অসুস্থ ছিলেন মঙ্গলা। সকালে শৌচাগারে গিয়ে পড়ে যান। তারপরেই টোটো ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ডুমুরকোলা গ্রামেও পেটের রোগ ছড়ায় বুধবার। ওইদিনই এক মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তারপরে ধাপে ধাপে অসুস্থ হন আরও অনেকে। স্থানীয়দের দাবি, গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ার ২৬টি পরিবারের মোট ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১৭ জনকে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

বুধবার রাতেই ওই গ্রামে যান রঘুনাথপুর ২ ব্লক মেডিক্যাল স্বাস্থ্য আধিকারিক বরুণ দত্ত। তিনি জানাচ্ছেন, পেটের রোগে অসুস্থদের মধ্যে যাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল, তাঁদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গ্রামে থাকা আক্রান্তদের মধ্যে দু’জনকে বিশেষ নজরে রাখতে স্বাস্থ্য কর্মীদের বলা হয়েছে।’’

ডুমুরকোলা গ্রামে পেটের রোগ কী ভাবে ছড়িয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে স্বাস্থ্য দফতর। ওই গ্রামের বাসিন্দারা ইন্দো-জার্মান জল প্রকল্পের পানীয় জল খান। ফলে ওই জল থেকে রোগ ছড়ালে রঘুনাথপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘সম্প্রতি গ্রামে মেলা হয়েছিল। সেখানে খাবার খেয়ে লোকজন পেটের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সেই দিকটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement