প্রতীকী ছবি।
বহু প্রতীক্ষার পরে ঝালদার প্রস্তাবিত সুবর্ণরেখা পানীয় জল প্রকল্প নিয়ে নাড়াচড়া শুরু করল রাজ্য সরকার। ওই জল প্রকল্পের ব্যাপারে এ বার এক কদম এগিয়ে গেল সংশ্লিষ্ট দফতর। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘সুবর্ণরেখা পানীয় জল প্রকল্পের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য আগে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি দফতরের সচিবকে দেখতে বলেছি।’’
বুধবার বিধানসভায় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বাজেটের উপরে আলোচনা চলার সময়ে ফিরহাদের নজরে ঝালদার ওই জল প্রকল্পের বিষয়টি নিয়ে আসেন বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিধানসভায় কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার নেপাল মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সুবর্ণরেখা পানীয় জল প্রকল্প আটকে রয়েছে। পুরমন্ত্রীকে আমি সেই উপেক্ষার কথা জানাই। আমার দাবি শুনে মন্ত্রী দফতরের বাজেটের উপর আলোচনা চলাকালীনই ঝালদা ও তুলিনের জন্য এই প্রকল্পে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন।’’
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ঝালদা পুরশহরের পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এক দশক আগে ঝালদা ২ ব্লকের মুরগুমা জলাধার থেকে ঝালদা পুরশহরে পানীয় জল সরবরাহের সূচনা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তাতে জলের চাহিদা পুরোপুরি মেটেনি। দিনে এক বার মাত্র জল আসে। তাও মাঝে মধ্যে পাম্পিং স্টেশনের সমস্যা, ঝড়বৃষ্টির ফলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এমন নানা কারণে জল বন্ধ থাকে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সে কারণে ঝালদা শহরের অদূরে ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখা নদী থেকে পানীয় জলের বিকল্প ব্যবস্থা করার দাবি জোরাল হয়ে ওঠে। নেপালবাবু বলেন, ‘‘বারবার সুবর্ণরেখা নদী প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকারের ছাড়পত্র মেলেনি। তাই প্রকল্পটি যাতে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেট (এমইডি) হাতে নেয়, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি।
এমইডি-র পুরুলিয়ার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুবীর নাগ বলেন, ‘‘ঝালদার জন্য সুবর্ণরেখা পানীয় জল প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্টের খসড়া আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। দফতর চাইলে আমরা তা জমা করে দেব।’’
ফিরহাদ বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পে বছরভর জল পাওয়া যাবে কি না, কতটা পরিমাণে পাওয়া যাবে, তা আগে খতিয়ে দেখা দরকার। সে জন্য প্রতিনিধি দল সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যাবেন।’’ তবে ঝালদা পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, সে সব কাজ তাঁরা আগেই সেরে রেখেছেন। ঝালদা-রাঁচী সড়কে সুবর্ণরেখা নদীর সেতু থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কেরুয়াড়ি এলাকায় নদীর গর্ভ থেকে পাম্পে জল তোলার ভাবনা রয়েছে। ওই এলাকায় বালির নীচে জলের মজুত কতখানি, একটানা কতক্ষণ সেখান থেকে জল তোলা যাবে, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ইতিমধ্যে করা হয়েছে। এমইডি-র পুরুলিয়ার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুবীরবাবু জানান, ওই প্রকল্প থেকে ঝালদার ১২টি ওয়ার্ডের জন্য দৈনিক ৪.৫ মিলিয়ন লিটার জলের বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
প্রকল্প রিপোর্টে নদীর গভীরে জল বেঁধে রাখতে আড়াআড়ি ভাবে ‘ইনফিল্টেশন গ্যালারি’ গড়ার কথা ভাবা হয়েছে। কংসাবতী নদীতে এই ধরনের ইনফিল্টেশন গ্যালারি তৈরি করেই পুরুলিয়া শহরের পানীয় জলের সমস্যা মোকাবিলা করেছে এমইডি। ঝালদা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেরুয়াড়িতে পাম্পিং স্টেশন এবং ঝালদা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মসিনাতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গড়ে তোলার জন্য জমিও ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। ঝালদার ১২টি ওয়ার্ডকে তিনটি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে।
ঝালদার পুরপ্রধান তৃণমূলের প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা আগেই পুরমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ঝালদাবাসীর দীর্ঘদিনের এই প্রকল্পটির কথা জানিয়েছিলাম। বিধানসভায় পুরমন্ত্রীর নজরে বিষয়টি নিয়ে আসায় নেপালবাবুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পুরমন্ত্রীর কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। প্রকল্পের কাজ আমরা ইতিমধ্যেই অনেকটাই এগিয়ে রেখেছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়ে গেলে ঝালদা জল-সঙ্কট মুক্ত হবে।’’