প্রতীকী ছবি।
‘বাংলা শস্যবিমা’য় আবেদনের সময়সীমা বাড়ল। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিমার জন্য আবেদন করা যাবে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এ বারে বৃষ্টির ঘাটতিতে বহু চাষিই ধান রোপণ করতে পারেননি। তাঁরাও বিমার সুবিধা পাবেন।
বাঁকুড়া জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় চার লক্ষ চাষি বিমার আওতায় আসতে চেয়ে আবেদন করেছেন। এর বাইরেও অন্তত ৬০ হাজার চাষি জেলায় রয়েছেন, যাঁরা এখনও আবেদন জানাননি।
বাঁকুড়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, “সাত দিন বিমার আবেদনের মেয়াদ বাড়িয়েছে রাজ্য। পঞ্চায়েত অফিস, সমবায় ব্যাঙ্ক ও কৃষি দফতরে যেমন শিবির চলছিল, তেমনই চলবে। এখনও যাঁরা আবেদন করেননি, তাঁদের জন্য জেলা জুড়ে প্রচার চলছে।”
পুরুলিয়া কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ৩১ অগস্ট পর্যন্ত জেলায় তিন লক্ষ ৩৯ হাজার ৪২৭ জন কৃষক বিমার সুবিধা পেতে নাম নথিভুক্ত করেছেন। মোট তিন লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর আমন চাষের জমির মধ্যে তিন লক্ষ ১৯ হাজার ৫৮০ হেক্টর বিমার আওতায় এসেছে। জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা চন্দন পাল বলেন, “যাঁরা এখনও বিমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাননি, আশা করি আগামী এক সপ্তাহে তাঁরা তা করবেন।” পূরণ করা ফর্মের সঙ্গে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রথম পৃষ্ঠা ও জমির পড়চার প্রতিলিপি জমা দিতে হবে বলে জানান তিনি। যাঁরা অন্যের জমি ভাগে চাষ করেন, তাঁদের নির্দিষ্ট ‘ফর্ম সেভেন’ পূরণ করে জমা দিতে হবে। বিমায় অন্তর্ভুক্ত চাষি একর প্রতি ৬৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন, জানাচ্ছে দফতর।
এ দিকে, বৃষ্টির ঘাটতিতে বাঁকুড়া জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা যে ছোঁয়া যাবে না, তা নিয়ে কার্যত আগেই নিশ্চিত ছিল কৃষি দফতর। তবে অগস্টে বৃষ্টির ঘাটতি মেটায় লক্ষ্যমাত্রার অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছনো গিয়েছে, দাবি কৃষি দফতরের।
দফতর সূত্রে খবর, অগস্টের শুরুতে যেখানে জেলায় ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ হয়েছিল, মাসের শেষে তা পৌঁছেছে প্রায় ২ লক্ষ ৯৩ হাজার হেক্টরে। জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রার (প্রায় ৩ লক্ষ ৮২ হাজার হেক্টর) যা অনেকটাই কাছাকাছি। কৃষি-কর্তাদের একাংশ জানান, অগস্টে জেলায় স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত হয় ২৯৬.৩ মিলিমিটার। এ বারে তা হয়েছে ৩৩৪ মিলিমিটার। তাতে বৃষ্টির ঘাটতি কিছুটা পুষিয়েছে। উপ-কৃষি অধিকর্তা বলেন, “বৃষ্টির বেশ ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রার অনেকটা কাছাকাছি ধান রোপণ হয়েছে। সেই ধান বাঁচানোই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। চাষিদের এ নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে।”
আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি পুরুলিয়াতেও। জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার তিন লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর আমন চাষের জমির মধ্যে দুই লক্ষ ৪০ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে রোয়ার কাজ হয়েছে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ শতাংশ জমিতে ধান রোয়া গিয়েছে। তবে শেষমেশ কতটা ফলন মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান চাষিরা থেকে কৃষি দফতর।
‘কানালি’ (সমতল) ও ‘বহাল’ (নিচু) জমিতে অগস্টের মাঝামাঝি বা তার পরের বৃষ্টি কার্যকরী হলেও ‘বাইদ’ (উঁচু) জমিতে তা কাজে লাগেনি বলে দাবি। কৃষকদের একাংশ জানান, ‘বাইদ’ জমিতে ধান রোয়ার সময় তত দিনে পেরিয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি কাজে আসেনি। জেলার মোট আমন চাষের জমির কম-বেশি ৫৭ শতাংশই ‘বাইদ’ জমি হওয়ায় তা সামগ্রিক ভাবে জেলার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধা হয়েছে।
অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে রাজ্য কৃষি দফতরের বিশেষ সচিব হৃষিকেশ মুদি আমন চাষের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জেলায় আসেন। তার ঠিক আগে, জোড়া নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন ব্লকই তখন জল থইথই করছে। তবে পরিদর্শনে গিয়ে প্রায় সব জায়গায় চাষিদের তরফে ওই কৃষি-কর্তাকে শুনতে হয়েছিল, বৃষ্টি দেরিতে এসেছে। এখন অঝোর বৃষ্টি হলেও বাইদ জমিতে আর ধান রোয়া যাবে না। কারণ, ‘আফর’ (চারা) লাগানোর সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তবুও অনেক চাষি ‘বাইদ’ জমিতে ধান রোয়ার কাজ করেছেন। আশা, যদি বীজটুকু ঘরে তোলা যায়। এ পরিস্থিতিতে আগামী রবি মরসুমকে পাখির চোখ করতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি-কর্তারা। জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা চন্দন পাল বলেন, “সামনের রবিশস্যের মরসুমটা আমরা একটু আগে থেকে ধরতে চাইছি। বাইদ জমি যেখানে ধান হল না, সেখানে ডাল চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। তার প্রস্তুতি চলছে।”