পঠনপাঠন। নিজস্ব চিত্র
অজ্ঞাতপরিচয় কেউ স্কুলে ঝুলিয়ে গিয়েছে তালা। ঝুঁকি নিয়ে কেউ সেই তালা ভাঙতে রাজি ছিলেন না। অগত্যা স্কুলের বাইরে বসেই খুদেদের ক্লাস নিলেন শিক্ষকেরা। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার মানবাজার ১ শিক্ষাচক্রের পুটকাডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। কে স্কুলে তালা ঝুলিয়েছে, তার মতলবই বা কী, তা নিয়ে দিনভর চলে জল্পনা।
তবে শিক্ষা দফতরের অনুমান, মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে কয়েকটি স্বনির্ভর দলের মধ্যে চলা বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে। বিকেলের দিকে স্কুল খুলতে পুলিশের হস্তক্ষেপ চায় শিক্ষা দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগেও এক বার ওই স্কুলে তালা ঝোলানো হয়েছিল। সে বার তালা খুলতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল শিক্ষকদের। তাই এ বার তাঁরা ঝুঁকি নেননি।
স্কুল শেষে প্রতিদিনই দরজা তালাবন্ধ করেন শিক্ষকেরা। এ দিন তাঁরা এসে স্কুলে এসে দেখেন, দরজায় ঝুলছে আরও একটি তালা। কিন্তু কে সে তালা ঝুলিয়েছে, তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। স্কুল চত্বরের বাসিন্দারাও এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি। তালা ভাঙার ঝুকি নিতে নারাজ শিক্ষকেরা শেষ পর্যন্ত স্কুলের বাইরেই ক্লাস নিতে শুরু করেন। কিছু ক্ষণ পরে মিড-ডে মিল রান্নার কর্মীরা স্কুলে আসেন খাবার তৈরির জন্য। স্কুলের বাইরে বসে থাকতে হয় তাঁদের।
এ দিন দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক গুণধর বাউরি ও সহশিক্ষক পার্থ কুণ্ডু স্কুলের বাইরে পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন। গুণধরবাবু বলেন, ‘‘কে বা কারা তালা ঝুলিয়েছে জানি না। তালা ভাঙার ঝুঁকি নিইনি। ঘটনার কথা বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানিয়েছি।’’
মানবাজার ১ শিক্ষাচক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক নন্দদুলাল সিংহ বলেন, ‘‘স্কুলে তালা ঝোলানো হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। ঘটনা জানতে দুই প্রতিনিধিকে স্কুল পাঠিয়েছি।’’ পরিদর্শকের নির্দেশ পেয়ে স্কুলে এসেছিলেন শিক্ষা দফতরের দুই প্রতিনিধি মিঠু পুরোহিত এবং অসীম মাহাতো। মিঠুবাবু বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কিছু বলতে পারেননি। বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশমতো ঘটনাটি পুলিশকে জানাচ্ছি।’’ তাঁদের ধারণা, এই ঘটনার নেপথ্যে থাকতে পারে মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে স্বনির্ভর দলগুলির মধ্যে কোন্দল।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাস তিনেক আগে একাধিক অভিযোগকে কেন্দ্র ওই স্কুলে গোলমাল হয়েছিল। স্কুলে তালা পড়েছিল। আগে মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্বে ছিল তিনটি স্বনির্ভর দল। আরও দু’টি দল সেই দায়িত্ব নিতে চাইলে বিবাদ শুরু হয়। পরে প্রশাসন সে দু’টি দলকেও রান্নার কাজে সামিল করে। সোমবার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি দলের সদস্যেরা স্কুলে রান্না করেন। তখন পুরনো একটি দলের সদস্যারা তাঁদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ঘটনার কথা এ দিন জানতে পারেন শিক্ষা দফতরের ওই দুই প্রতিনিধি।
এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রান্নার দায়িত্ব পাওয়া নতুন একটি দল সোমবার থেকে রান্না শুরু করেছে। শুনেছি, তাদের নাকি কে বা কারা রান্না করতে নিষেধ জানিয়েছে।’’ নতুন দায়িত্ব পাওয়া একটি স্বনির্ভর দলের সদস্যা প্রিয়া বাউরির অভিযোগ, ‘‘কাল আমরা রান্না করেছি। কয়েকজন মহিলা রান্না করতে নিষেধ করেছিলেন। আমরা কেন নিষেধ মানব? তাই এ দিনও রান্না করতে এসেছিলাম। কিন্তু স্কুল তালাবন্ধ থাকায় ঢুকতে পারিনি।’’