উচ্ছেদ চলছে। রবিবার সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নিকাশি নালা দখল করে গড়ে ওঠা নির্মাণ ভাঙতে ফের তৎপর হল সিউড়ি পুরসভা।
রবিবার ভেঙে ফেলা হল সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া বেশ কয়েকটি স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানের অংশ। দিন কয়েক আগেই পুরসভা সিউড়ি হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর লাগোয়া দখলদারি ভেঙে ফেলেছে। সিউড়ির তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড থেকে নির্গত মূল নিকাশি নালাটি কার্যত মজে গিয়েছিল। সেই জন্য বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সুপারমার্কেটের পাশ দিয়ে যাওয়া দুবরাজপুর রোডে অন্তত ২০টিরও বেশি দোকানের অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কয়েক জন ব্যবসায়ী নিজেরাই এ কাজে পুরসভাকে সাহায্য করেছেন।’’
পুরসভার এই উদ্যোগকে শহরবাসীর অনেকেই সাধুবাদ জানালেও এ দিনের কাজটিকে মোটেও গুরুত্ব দিতে রাজি নয় সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতি এবং বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্বেরা। দু’পক্ষেরই দাবি, পুরসভার এই তৎপরতার মধ্যে কেবল দেখনদারিই রয়েছে।
কেন এই অভিযোগ?
সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কিসান পালের সাফ বক্তব্য, ‘‘পুরসভা কার্যত নর্দমা পরিষ্কার করছে বলা চলে। দু’দিন যেতে না যেতেই নর্দমা আবার যে কে সে-ই চেহারায় ফিরে যাবে। দখলদারি হটানো বলে যা হয়েছে, তা আদতে লোক দেখানো।’’ কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরছেন জেলা সদরের মূল বাসস্ট্যান্ডের বর্তমান ছবিটা। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘প্রকৃত উচ্ছেদই যদি পুরসভার উদ্দেশ্য থাকবে, তা হলে কার্যত বাজারে পরিণত হওয়া জেলা সদরের মূল বাসস্ট্যান্ডই ওঁরা প্রথম অভিযান চালাতেন। অভিযান চলত বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢোকা-বের হওয়ার মুখে অবৈধ ভাবে বসে থাকা দোকানগুলির উপরে। কই, সেখানে তো হাত পড়েনি?’’
প্রায় একই বক্তব্য সিউড়ির দু’টি বাসমালিক সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং অব্দুল আজিম ওরফে ওলির গলাতেও। দু’জনেরই অভিযোগ, ‘‘বাসস্ট্যান্ডটাই কার্যত জরবদখলের প্রকৃত উদাহরণ হয়ে গিয়েছে। অথচ ওই বাসস্ট্যান্ড দিনে গড়ে ২২৫টি বাস যাওয়া-আসা করে। প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। সেই জায়গাটাই বেমালুম চুরি হয়ে গিয়েছে!’’ তাঁরা আরও জানান, গোটা বাসস্ট্যান্ড জুড়ে গড়ে উঠেছে ছোটবড় স্থায়ী-অস্থায়ী অসংখ্য দোকান। তার জেরে বাস এবং যাত্রীদের নড়াচড়ার জায়গাটাই হারিয়ে গিয়েছে প্রায়। এমনকী, বাসযাত্রীদের জন্য তৈরি একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়েও দোকানঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এমন দম বন্ধ করা পরিস্থিতির ফলে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরই এক জনের মৃত্যু হয়েছে এই বাসস্ট্যান্ডে। ওই ঘটনার পরে দখলদারি সরিয়ে ফেলার আশ্বাস দিলেও পুরসভা বা প্রশাসন, কেউ-ই তাতে হাত দেয়নি। শুভাশিসবাবুদের আরও ক্ষোভ, ‘‘জায়গার অভাবে আমাদের কিছু বাস বাইরে দাঁড় করানো হতো। তা নিষেধ করা হলেও রাস্তা আগলে একটি অবৈধ ট্যাক্সিস্ট্যান্ড এখনও দিব্যি রয়েছে।’’
এই পরিস্থিতিতে কেবল নর্দমা পরিষ্কার করে আসল লক্ষ্যই পূরণ হবে না। শুধু পিঠ চাপড়ানি মিলতে পারে বলে শুভাশিসবাবুদের মত। যদিও পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবু বলছেন, ‘‘আমরা দখলদারি হটাতে বদ্ধপরিকর। একে একে সব হবে। প্রশাসনের সাহায্যেই হবে।’’