Teacher

অসুস্থ থাকায় স্কুলে যাননি এক মাত্র শিক্ষক, পড়ুয়াদের কথা ভেবে নিজেই স্কুলে ছুটলেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিক

বাঁকুড়া ২ ব্লকের বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর ঘটনা। স্কুলে সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৩। স্কুলের চারটি ক্লাসে পড়ানোর জন্য রয়েছেন এক জন মাত্র শিক্ষক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ২৩:৫৪
Share:

— নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের একমাত্র শিক্ষক অসুস্থতার কারণে স্কুলে যেতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সার্কল ইন্সপেক্টরকে সে কথা জানিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। শিক্ষক হাজির না হওয়ায় স্কুলে এসেও ফিরে যেতে হবে পড়ুয়াদের, এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি সার্কেল ইন্সপেক্টর। তাই চক ডাস্টার হাতে ক্লাস করানো থেকে মিড ডে মিলের তদারকি— সবই করলেন নিজে।

Advertisement

বাঁকুড়া ২ ব্লকের বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর ঘটনা। স্কুলে সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৩। স্কুলের চারটি ক্লাসে পড়ানোর জন্য রয়েছেন এক জন মাত্র শিক্ষক। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগেও স্কুলে দু’জন শিক্ষক ছিলেন। এক জন মাস তিনেক আগে অবসর নেওয়ায় তখন থেকে পঠনপাঠন ও মিড ডে মিল তদারকির যাবতীয় ভার শিক্ষক সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই। বৃহস্পতিবার সকালে সঞ্জয় বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি স্কুলে উপস্থিত হতে পারবেন না জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের বাঁকুড়া সদর পূর্ব সার্কেলের ইন্সপেক্টর সজল মাহাতোর কাছে ছুটির আবেদন করেন। একমাত্র শিক্ষক হঠাৎ ছুটি নেওয়ায় তড়িঘড়ি অন্য শিক্ষক পাঠানো যায়নি। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে স্কুলে এসেও পড়াশোনা না করে বাড়ি ফিরতে হবে পড়ুয়াদের, এ কথা ভেবেই স্কুলে চলে যান সজল। তাঁর তৎপরতায় খুশি এলাকার অভিভাবকেরা। কিন্তু তাঁদের দাবি, এ ভাবে রোজ রোজ তো আর সার্কেল ইন্সপেক্টরের পক্ষে স্কুলে এসে ক্লাস করানো সম্ভব নয়। তাই দ্রুত দ্বিতীয় শিক্ষক পাঠানো হোক স্কুলে।

স্থানীয় অভিভাবক অনিতা বাউরি বলেন, ‘‘স্কুলে একজন শিক্ষককে পাঁচটি ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়াতে হয়। তাতে ভাল ভাবে পঠনপাঠন করানো সম্ভব হয় না। একমাত্র শিক্ষক ছুটি নিলে স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকে। এ ভাবে আর কত দিন চলবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘বাহাদুরপুর গ্রামের আশপাশে কোথাও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। জঙ্গল পেরিয়ে দূরবর্তী স্কুলে ছোট শিশুদের পাঠাতে মন চায় না। তাই শিক্ষকের সমস্যা সত্ত্বেও এই স্কুলেই পরিবারের শিশুদের পড়াতে বাধ্য হয় বাহাদুরপুর গ্রামের মানুষ।’’ প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের বাঁকুড়া সদর পূর্ব সার্কেলের ইন্সপেক্টর সজল মাহাতো বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইনে বলা আছে প্রতিটি স্কুলে অন্তত পক্ষে ২ জন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। আমার সার্কেলে এমন ৩টি স্কুল রয়েছে, যেখানে এক জন মাত্র শিক্ষক নিয়ে চলছে। ওই ৩টি স্কুলেই দ্বিতীয় শিক্ষক নিয়োগের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও অজানা কারণে এখনও দ্বিতীয় শিক্ষক আসেননি। এই পরিস্থিতিতে আজ বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক অসুস্থ হয়ে ছুটি নেওয়ায় তড়িঘড়ি আমি ছুটে এসেছি।’’ একই সার্কেলের অধীনে থাকা বাঁকুড়া শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা হাতেগোনা। সেখানে শিক্ষক রয়েছেন দু’জন বা তারও বেশি। সেই জায়াগায় দাঁড়িয়ে শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাহাদুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই হাল কেন? বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের তরফে ওই স্কুলে সাময়িক ভাবে দ্বিতীয় শিক্ষক নিয়োগ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement