আদালতের পথে। নিজস্ব চিত্র
পাড়ুইয়ের হাটইকড়া গ্রামে শনিবার বিজেপি-র অবরোধ ঘিরে ধুন্ধুমারের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শিবিরই। ওই ঘটনার পরে পরেই সাসপেন্ড হলেন পাড়ুই থানার এক সাব ইন্সপেক্টর। একই সঙ্গে পুলিশ ওই সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। বীরভূমের পুলিশ শ্যাম সিংহ রবিবার বলেন, ‘‘আমরা গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয়তার জন্য এক জন এসআই-কেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’
রবিবারও থমথমে ছিল হাটইকড়া গ্রাম, চলেছে পুলিশের টহলদারি। ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে, যখন ওই গ্রামে বিজেপির বিস্তারক সনৎ দাসের বাড়ি ভাঙচুর এবং তাঁকে ও তাঁর মাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের অবিনাশপুর অঞ্চলের সভাপতি রাজু মুখোপাধ্যায় ও তাঁর সঙ্গীদে বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে বিজেপির পক্ষ থেকে পাড়ুই থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা শনিবার সকালে হাটইকড়া গ্রামে বিজেপি কর্মীদের হুমকি দেন। এর পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পুরন্দরপুর বোলপুর রাস্তায় হাটইকড়া ব্রিজের কাছে পথ অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা।
কিছুক্ষণ অবরোধ চলার পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। কিন্তু, সেই সময় তৃণমূল নেতা রাজু মুখোপাধ্যায় ও তার কয়েক জন সঙ্গী মোটরবাইকে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হাতের নাগালে তাঁদের পেয়ে বাঁশ, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। কোনও ক্রমে রাজু, অবিনাশপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান তাপস দাস-সহ পাঁচ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ সুলতানপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করায়।
ওই ঘটনার পরে দুই দলের নেতারাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পুলিশের ভূমিকায়। তৃণমূলের সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। কারণ, বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের দুই কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তা হলে আবার পথ অবরোধ কেন করল ওরা? তা ছাড়া তৃণমূল করে বলে আমাদের কর্মীদের পুলিশের সামনেই মারধর করা হয়। পুলিশ কিছু করেনি।’’ অন্য দিকে, বিজেপির সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি পবন বাগদির অভিযোগ, ‘‘ওই
ঘটনা পুলিশ এবং তৃণমূলের পরিকল্পনায় হয়েছে। যাঁদের গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করা হয়েছিল, তাঁরাই ওই রাস্তা দিয়ে যান কোন সাহসে! অবরোধ তো তার আগে উঠে গিয়েছিল। ওঁরা ওই রাস্তা দিয়ে এলেন
বলেই তো এত সমস্যার সৃষ্টি হল।’’ বিজেপি-র দাবি, পুলিশ চাইলে গণ্ডগোল এড়াতে পারত।
একই ভাবে পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন এলাকার অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। এর পরেই রাতারাতি সাসপেন্ড হলেন পাড়ুই থানার এসআই। তবে যে অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁর নাম উহ্য রেখেছেন পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পুলিশ অফিসার শনিবার হাটইকড়ায় পথ অবরোধের সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন। সেই সময় তিনি নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ কর্তাদের দাবি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি-র বিস্তারকের অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূলের ৬ জন এবং হাটইকড়া মোড়ে অবরোধ এবং তৃণমূলের কর্মীদের মারধরের অভিযোগের ভিত্তিতে পৃহক দু’টি মামলায় ৮ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার ধৃতদের সিউড়ি জেলা আদালতে হাজির করায় পুলিশ। সিউড়ি কোর্টের সরকারি আইনজীবী অসীমকুমার দাস বলেন, ‘‘শনিবারের ঘটনায় ৮ জনের মধ্যে ২ জনকে ৪ দিনের পুলিশ হেফাজত এবং
বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আর বৃহস্পতিবার রাতের যে ঘটনা, তাতেও ধৃত ৬ জনকে এ দিন আদালতে তোলা হয়। দু’জনের ৪ দিনের পুলিশ হেফাজত
এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল হেফাজত হয়।’’