নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া জেলার গ্রামীণ এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলিতে প্রকট শিক্ষকের অভাব। যার জেরে চরম অনিশ্চয়তার মুখে সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা। এর কারণ হিসেবে সরকারের নতুন শিক্ষক বদলি প্রকল্প ‘উৎসশ্রী’কেই দুষছেন কর্মরত শিক্ষকদের একাংশ।
শিক্ষক শিক্ষিকারা বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলি নিতে পারেন রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে। অভিযোগ, সেই প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে পুরুলিয়ার গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল ছেড়ে বাড়ির কাছাকাছি চলে গিয়েছেন বহু শিক্ষক। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে তেমন ভাবে আসেননি শিক্ষক। এর ফলে ক্লাস চালাতে গিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মরত অন্য শিক্ষকরা। পরিস্থিতি এমনই যে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও ক্লাস করানোর নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না।
জেলায় রঘুনাথপুর এলাকার গুনিয়ারা হাইস্কুলে মাত্র দু’জন শিক্ষক। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসাদ মণ্ডল বলেন , ‘‘ছাত্র ছাত্রীদের বলেছি ভর্তি হতে পারিস, কিন্তু শিক্ষক নেই। তাই ক্লাস হচ্ছে না কেন প্রশ্ন তুললেও কিছু করতে পারব না।’’ ৩০০ জন ভর্তি হবে ডিমডিহা হাইস্কুলে, কিন্তু সেখানেও বিজ্ঞান বিভাগ পড়ানোর শিক্ষক নেই। জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক কালু কুইরি। একাদশে ৩০০ জনের বেশি পড়ুয়া ভর্তি হওয়ার কথা জয়পুরের মণিপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। কিন্তু সেখানেও জীবন বিজ্ঞান ও দর্শনের শিক্ষক নেই বলে জানান প্রধান শিক্ষক সমরকিশোর মাহাত। একই অবস্থা নিলডি হাই স্কুলেরও।
বৃহস্পতিবার, বাগমুন্ডি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীরা বাঘমুন্ডি ব্লকে গিয়ে শিক্ষিকা চাই বলে দাবি জানাতে থাকে। পরে তারা এ বিষয়ে ব্লকে একটি আবেদনও জমা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই স্কুলে আগে ন’জন শিক্ষিকা ছিলেন আর এখন তিন জন আছেন। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রূপা রায়ের সাফ কথা, ‘‘স্থায়ী না হোক অস্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা না পেলে শিক্ষা প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আপাতত অস্থায়ী বা পার্শ্বশিক্ষক দিয়ে কাজ চালানো হোক’’। এবিটিএ-র পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাস বলেন, ‘‘উৎসশ্রীতে শিক্ষক বদলি হচ্ছেন, অথচ নিয়োগ হচ্ছে না। এই ঘাটতি পূরণ কী ভাবে হবে?’’ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা শিক্ষক জ্যোতির্ময় বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটি ভাল কাজ করেছেন আমাদের মানবিক মুখ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা করতে গিয়ে সাময়িক কিছু সমস্যা হচ্ছে। খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।’’ প্রয়োজনে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে শিক্ষা দফতর ভাবনা চিন্তা করছে বলেও জানান তিনি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।