বর্শা ছেড়ে পিকনিকের আনন্দ শিকার পরবে

জঙ্গলের পশুদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। এতদিন শিকার পরবে আসা লোকজনদের এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করতেন বনকর্মীরা।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৫
Share:

মগ্ন: শিকারে নয়, হুমঘরের পিটরিশোলের লেবুরাম মুর্মু আর গড়বেতার রসকুণ্ডুর রূপাই মুর্মু ডুবে থাকলেন বাঁশির সুরে। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলের পশুদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। এতদিন শিকার পরবে আসা লোকজনদের এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করতেন বনকর্মীরা। এ বার তীর, ধনুক, বর্শা নিয়ে আসা শিকারীদের ডেকে ডেকে জঙ্গল ও পশুদের কেন বাঁচিয়ে রাখা দরকার, সে কথাই বোঝাচ্ছিলেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

সবাই যে কান দিলেন তা নায়। কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও কেউ কেউ অস্ত্র-শস্ত্র ফেলে হাঁড়িয়া খেয়ে গান ধরলেন, কেউ বাঁশি বাজালেন, কেউ বা মেলায় ঘুরে ঘুরে মেয়ে-বউয়ের সখ মেটাতে জিনিসপত্র কিনলেন। বুধবার বিষ্ণুপুরের জঙ্গল দেখলে, কী ভাবে বদলে যাচ্ছে শিকার পরব।

ফি বছরের মতো এ বছরও ৫ বৈশাখ পশ্চিম মেদিনীপুরের হুমঘর, লালগড়, গোয়ালতোড়, গড়বেতা, রসকুণ্ড, চাঁদাবিলা তো বটেই, পুরুলিয়ার বলরামপুর, ঘাটবেড়া, অযোধ্যা, কাশীপুর, পুঞ্চা, হুড়ার লোকজনও বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত ডিভিশনের বিষ্ণুপুর, জয়পুর, বাঁকাদহ রেঞ্জের জঙ্গলে শিকার করতে এসেছিলেন। ৩০-৭০ জনের দল গাড়ি ভাড়া করে এসেছিলেন। সঙ্গে শিকারের নানা সরঞ্জাম। কেউ কেউ ঢুকে পড়লেন জঙ্গলে। অনেকে আবার বিষ্ণুপুর রেঞ্জের দুন্দুরের জঙ্গলে বাঁকুড়া জেলা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সহ-সম্পাদক সনাতন কিস্কুর কথা শুনতে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। সনাতন বলছিলেন, ‘‘সকাল থেকেই আমরা জঙ্গলে ঘুরে প্রচার করছি ময়ূর, হরিণ মারবেন না। জঙ্গলে আগুন দেবেন না। অযথা শিকার করে বন্যপ্রাণ শেষ করবেন না।’’ সবাই কি শুনেছেন?

Advertisement

বলরামপুরের সুনীল কিস্কু, সোনামুখীর ভীমারার কালীপদ বেসরা, হুমগড়ের নবীন কিস্কু শিকার করেছেন। অনেকে অবশ্য শিকার না করলেও আনন্দ কম পাননি। গোয়ালতোড়ের কৃষ্ণ সোরেন, তড়িৎ সোরেন, লাগনা হেমব্রম বলেন, ‘‘শিকার না করা গেলেও সবাই মিলে একসঙ্গে রেঁধেবেড়ে খাওয়ার আনন্দ তো কম নয়!’’ বিষ্ণুপুরের ঘুঘুডাঙা গ্রামের মাধব সোরেন, সাধন সোরেনদের উপলব্ধি, ‘‘একটা সময় সত্যি বেপরোয়া শিকার করেছি। কিন্তু বয়স বাড়তে বুঝতে পেরেছি, খুব ভুল করেছি। তাই নতুন প্রজন্মের ছেলেদের অযথা শিকার করতে বারণ করছি। অনেকে বুঝছেন, তবে সংখায় কম। আরও সময় লাগবে।’’ বনকর্মীরাও মাইক, ব্যানার, প্রচারপত্রে সচেতনতার চেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁরাও বলেন, ধীরে ধীরে সবাই বুঝছে। এটাও কম নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement