রাজনগরের সিসল ফার্মের জমিতে ভুট্টা ফলিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।
পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন আদিবাসী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। উৎপাদিত ভুট্টা ছাড়ানোর যন্ত্র দেওয়া থেকে উৎপাদিত ফসল কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা— সবই হয়েছে সরকারি দফতরের সহযোগিতায়।
রাজ্য সরকারের মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে রাজনগরের সিসল ফার্মে পড়ে থাকা জমিতে স্থানীয় ৮টি স্বনির্ভর দলকে বর্ষার সময় ভুট্টা চাষে উৎসাহ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। মূল ফসল ভুট্টার সঙ্গে অন্তবর্তী ফসল হিসেবে চাষ হয়েছে বর্ষার বাদাম, বেড়া ফসল হিসেবে অড়হর এবং মেসতা।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, মোট প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে খরা অঞ্চলের উপযোগী চারটি ফসল লাগানো হয়েছিল। জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা শিবনাথ ঘোষ বলছেন, ‘‘অত্যন্ত সফল ভাবে চাষ করেছেন ওই সব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা।’’
পতিত জমিকে চাষযোগ্য করে তোলা বা এক ফসলি জমিকে দু’ফসলি করা অথবা বিকল্প উপায়ে কাজে লাগিয়ে প্রান্তিক মানুষের আয়ের উৎস বাড়াতেই রাজ্য সরকারের মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের সূচনা। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের আওতায় ছিল বীরভূমের রাজনগর, দুবরাজপুর, খয়রাশোল, মহম্মদবাজার, ইলামবাজার, রামপুরহাট ১, মুরারই ১ ও নলহাটি ১, সিউড়ি ১-সহ ১০টি ব্লক। সেই সুযোগটাই কাজে লাগানো হয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিসল ফার্মের পড়ে থাকা জমিতে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসল ফার্মের জমিতে চাষ করার জন্য কাছাকাছি ঢাকা নামক একটি গ্রামের ৮টি মহিলা আদিবাসী দলকে নির্বাচন করেছিল প্রশাসন। এ ভাবে পড়ে থাকা জমিতে ফসল ফলিয়ে খুশি ওই দলগুলি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দলগুলির অন্যতম চাঁদ ভৈরব, সাঁওতা সুসরিয়া, বীর নিরসা মুন্ডা, দিশম সিধো কানহু ইত্যাদি।
চাঁদ ভৈরবের দলনেত্রী তথা রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মোহকি বাস্কি, সুসরিয়া দলের প্রতিমা মারান্ডি, সিধো কানহু দলের ভাবিনী মুর্মু, বিরসা-র মনু কিস্কু বলছেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। ভুট্টা উঠেছে। বিক্রি হয়েছে। দিন তিনদিনের মধ্যে বর্ষার বাদামও উঠবে। কিছুদিন পরে উঠবে মেসতা ও অড়হর। ভাবছি আগামী দিনে এ ভাবেই চাষ করতে পারব।’’
প্রশাসন সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, মহিলা স্বনির্ভর দলের চাষ করতে উৎসাহ দেওয়াই নয় সেটা বিক্রির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর, পশু পাখির খাদ্য তৈরির জন্য ভুট্টা কিনতে আগ্রহী হয়েছিল প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর। সে কাজ সম্পন্ন। ওই দফতরের সঙ্গে ওই দলগুলির চুক্তি হয়েছিল। তবে মোহকি বলছেন, ‘‘এই অঞ্চলে চাষ মূলত বর্ষার জলের উপর নির্ভর। খরা প্রধান অঞ্চলের ফসল হলেও কম হলেও সেচ লাগে। একটু সেচের ব্যবস্থা হলে, বছরের অন্য সময়ও চাষ করা সম্ভব।’’