প্রাচীর নেই, আশঙ্কা ময়ূরেশ্বরের স্কুলে

এক দিকে পুকুর। অন্য দিকে খোলা মাঠ। পিছনে কাঁদর, সামনে ব্যস্ত রাস্তা। তারই মাঝে প্রাচীরবিহীন স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ময়ূরেশ্বরের গিধিলা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের। কারণ বারবার প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও প্রাচীর নির্মাণের কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০২:০৩
Share:

নিরাপত্তার খোঁজে গিধিলা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

এক দিকে পুকুর। অন্য দিকে খোলা মাঠ। পিছনে কাঁদর, সামনে ব্যস্ত রাস্তা। তারই মাঝে প্রাচীরবিহীন স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ময়ূরেশ্বরের গিধিলা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের। কারণ বারবার প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও প্রাচীর নির্মাণের কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে স্থাপিত ওই স্কুলের অদূরেই একদিকে রয়েছে গভীর পুকুর। সারা বছরই সেখানে জল থাকে। অন্যদিকে খোলা মাঠ। পিছনে কাঁদর। বর্ষা কিংবা বেশি বৃষ্টি হলেই ওই কাঁদরের জল উপচে চলে স্কুলের চৌকাঠে। আর সামনে দিয়ে গিয়েছে শিবগ্রাম-ষাটপলশা সড়ক। ওই রাস্তায় যান চলাচল লেগেই রয়েছে। তাই কখন কোনদিক থেকে বিপদ আসে, সব সময় সেই আশঙ্কায় সিঁটিয়ে থাকতে হয় শিক্ষকদের। একজন শিক্ষককে কার্যত সবসময় পড়ুয়াদের পাহারা দিতে হয় বলে স্কুল সূত্রেই জানানো হয়েছে। এরফলে ব্যাঘাত ঘটে পঠনপাঠনেও।

এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৬৮ জন। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত ৪ টি ক্লাসের জন্য বরাদ্দ রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। পঠন পাঠনের পাশাপাশি পালা করে ওই শিক্ষকদেরই সামাল দিতে হয় মিড-ডে মিল সহ প্রশাসনিক ঝক্কিও। স্বভাবতই একজন শিক্ষককে পালাক্রমে ছাত্রছাত্রীদের পাহারা দিতে গিয়ে কোপ পড়ে পঠনপাঠনে। সহকারি শিক্ষক সুনীল কুমার বসু, জীতেন্দ্রনাথ সরখেল জানান, ‘‘দুর্ঘটনার আশঙ্কা আমাদের পাঠদানের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। কখন কি হয়, সব সময় সেই দুশ্চিন্তায় থাকি। সবদিক সামাল দিতে গিয়ে তাই প্রভাব পড়ে পঠন পাঠনেও। এমনিতেই স্কুলছুট পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়ের সংখ্যাই আমাদের স্কুলে বেশি। আমরা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে স্কুল চালাতে পারলে স্কুলের অনেকখানিই মানোন্নয়ন ঘটত।’’

Advertisement

দুশ্চিন্তা রয়েছে অভিভাবকদেরও মধ্যেও। নকুল ঘোষ, অজিত বায়েন, উৎপল দাসরা বলেন, ‘‘বিপদ মুখিয়ে থাকা ওই স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি পাই না। শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারে সরকারের নানা ঘোষণার কথা শুনি। কিন্তু আমাদের এই স্কুলের পরিস্থিতি দেখে মনে হয় ওই সব আসলে কথার কথা।’’ গিধিলা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সমস্যা রয়েছে নিকাশি নিয়েও। স্কুলের সামনেই রয়েছে একটি কালভার্ট। মাঠভাসি জল ওই কালভার্ট দিয়ে হামেশাই স্কুলচত্বর প্লাবিত করে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জ্যোতি ভল্লা, অষ্টম শ্রেণির দেবব্রত দাস, ষষ্ঠ শ্রেণির রাজা মণ্ডলের কথায়, মাঠের জল ঢুকে স্কুল চত্বর কাদা হয়ে যায়। পিছলে পড়ে গিয়ে জামা প্যান্ট জল কাদায় নষ্ট হয়ে যায়। তখন হয় আমাদের ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। নয়তো ওই অবস্থাতেই স্কুল করতে হয়।’’

স্কুলের আর এক সহকারি শিক্ষক মহঃ আবুল খাঁয়ের বলেন, ‘‘সাধারণত স্কুল চত্বরেই আমাদের প্রার্থনা এবং মিড ডে মিল খাওয়ানো হয়। কিন্তু স্কুল চত্বর প্লাবিত হয়ে গেলে খুব অসুবিধায় পড়ি। স্কুলের ভিতরেই কোনওরকমে কাজ চালাতে হয়।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃপাময় দাস জানান, প্রাচীর এবং নিকাশি নালার জন্য আমরা বহুবার পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়ায় আশংকা আর দুশ্চিন্তায় স্কুল চালাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ঢেকার তৃণমূল পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াই বলেন, ‘‘সত্যিই ওই স্কুলের প্রাচীর এবং নিকাশি নালা জরুরী। কিন্তু ওই দুটি নির্মাণ আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে। তাই ওই বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’ ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘প্রস্তাব খতিয়ে দেখে আর্থিক সংস্থান হলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা কার্যকর করার ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement