—প্রতীকী চিত্র।
সরকারি ও সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকদের টিউশন নিয়ে বিতর্কে গত কয়েক মাস ধরে তোলাপাড় হয়েছে বাঁকুড়া জেলার নানা এলাকা। স্কুল শিক্ষকদের টিউশনের দাবিতে পথে নামে পড়ুয়ারা। অন্য দিকে, শিক্ষা দফতরের নিষেধের পরে স্কুল শিক্ষকদের টিউশন নিয়মবিরুদ্ধ বলে প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা পথে নামেন গৃহশিক্ষকেরা। সেই বিতর্কে জল ঢালতে বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) জানিয়ে দিলেন, স্কুল শিক্ষকেরা কোনও ভাবেই টিউশনে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এই মর্মে তিনি স্কুলে-স্কুলে শিক্ষকদের টিউশন বন্ধ করতে ফের নির্দেশিকা পাঠালেন।
আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুল শিক্ষকদের টিউশন বন্ধ করা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবারই জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছিল ‘গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতি’। সেই স্মারকলিপি পেয়েই ওই নির্দেশিকা পাঠান জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গৌতমচন্দ্র মাল। তিনি বলেন, “সরকারি ও সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা করতে পারেন না। আগেও বিভিন্ন স্কুলকে এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। ফের তাঁদের বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।”
জেলার বিভিন্ন স্কুলে ওই নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। বাঁকুড়ার মগরা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকেশ পাত্র বলেন, “জেলা স্কুল পরিদর্শকের তরফে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের টিউশন বন্ধের নির্দেশ পেয়েছি। শীঘ্রই স্কুলের শিক্ষকদের বিষয়টি জানানো হবে।”
কিন্তু এমন নির্দেশিকা তো আগেও স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো হয়েছিল। তাতেও তো স্কুল শিক্ষকদের টিউশন বন্ধ হয়নি। তাই শুধুমাত্র নির্দেশিকায় সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা কতটা বন্ধ করা যাবে, তা নিয়ে অবশ্য
প্রশ্ন উঠছে।
ঘটনা হল, নানা কারণে স্কুল শিক্ষকদের কাছে টিউশন পড়ার ঝোঁক ইদানীংকালে অনেকখানি বেড়েছে। এর ফলে বহু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী টিউশন করার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে গৃহশিক্ষকদের একাধিক সংগঠন। সেই আন্দোলনের জেরে বেশ কয়েক মাস আগেই জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস-এর তরফে স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।
তখনই জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফেও কয়েকটি স্কুলে ওই নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। এর প্রতিবাদে আবার জেলার কয়েকটি জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে পথে নামে। তারা দাবি করে, কোনও ভাবেই স্কুল শিক্ষকদের টিউশন বন্ধ করা যাবে না।
গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির তরফে জেলার কোন ব্লকে কত স্কুল শিক্ষক টিউশন পড়ানোয় যুক্ত, সে তালিকাও জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে দেওয়া হয়। ওই সংগঠনের জেলা সম্পাদক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চলতি শিক্ষাবর্ষের মাঝে স্কুল শিক্ষকেরা টিউশনি বন্ধ করে দিলে পড়ুয়ারা বিপদে পড়বে ভেবে আমরা তেমন জোরাল আন্দোলনে নামিনি। তবে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে এমনটা আর চলতে দেওয়া হবে না।’’ তাঁর দাবি, কেবল নির্দেশিকা দিলেই হবে না, বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়ে যে সব স্কুল শিক্ষক টিউশনে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে শিক্ষা দফতরকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজ্যজুড়ে স্কুল শিক্ষকদের টিউশন বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামা ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রাইভেট টিউশন উন্নয়ন সমিতি’-র বাঁকুড়া জেলা সভাপতি কাঞ্চন ঘোষ বলেন, “বহু শিক্ষত বেকার ছেলেমেয়ে চাকরি পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে টিউশন করে সংসার চালানোর যে পথ রয়েছে, সেটিও বন্ধ হয়ে পড়ছে। এটা বন্ধ করতে রাজ্য সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”
স্কুল শিক্ষকদের টিউশন পড়ানো বন্ধ করা নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলির কী মত? ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’-র জেলা সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “কোনও ভাবেই স্কুল শিক্ষকদের টিউশন করা আমরা সমর্থন করি না।”
এবিটিএ-র জেলা সহ-সম্পাদক আশিস পান্ডের দাবি, “অল্প কয়েকজন স্কুল শিক্ষক এখনও টিউশনে যুক্ত। তবে এটা পুরোপুরি বন্ধ হওয়াই দরকার।”