ভেঙে ফেলা হচ্ছে বঙ্গ বিদ্যালয়ের জমিতে গড়ে ওঠা বেআইনি নির্মাণ। শনিবারের নিজস্ব চিত্র।
আগাম ঘোষণা মতো অভিযান চালিয়ে বাঁকুড়ার বঙ্গবিদ্যালয় চত্বর দখলমুক্ত করল জেলা প্রশাসন। শনিবার সকালে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পার্থ ঘোষ এবং মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালার নেতৃত্বে বুলডোজার নিয়ে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়। ঘণ্টা চারেকের মধ্যে প্রায় ১৫টি অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলে অভিযান শেষ হয় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। মহকুমাশাসক জানান, নোটিস অনুযায়ী ওই নির্মাণগুলি সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, “নির্বিঘ্নেই অভিযান শেষ হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে স্কুলের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলতে বলেছি।’’
বঙ্গবিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক অনিমেষ চৌধুরী জানান, পাঁচিল দেওয়ার প্রক্রিয়া তাঁরা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন। তবে সমস্ত জমি ঘিরতে যত টাকা লাগবে তা স্কুলের কাছে নেই। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করা হবে বলে তিনি জানান।
বাঁকুড়ার অন্যতম প্রচীন স্কুল বঙ্গ বিদ্যালয়ের জমি বেদখল হওয়ার অভিযোগ অনেক দিন ধরেই উঠে আসছিল। সম্প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষ মহকুমাশাসকের দফতরে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে স্কুল চত্বরে নেশা, ইভ-টিজিং, মাঠ নষ্ট করা প্রভৃতির অভিযোগ জানায়। সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে স্কুলের জমি দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন মহকুমাশাসক।
মহকুমাশাসকের বিজ্ঞপ্তিতে দোকান ভাঙার পাশাপাশি বঙ্গ বিদ্যালয় সংলগ্ন শিল্প দফতরের জমিতে গড়ে ওঠা কিছু বস্তিও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেগুলি ভাঙার জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সম্প্রতি তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ দিন ওই বস্তি ভাঙা হয়নি। মহকুমাশাসক বলেন, “সামনেই বিভিন্ন পরীক্ষা রয়েছে বলে ওই বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে আরও এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য।”
বঙ্গ বিদ্যালয়ের জায়গায় প্রায় তিন দশক ধরে দোকান করে গড়ে ব্যবসা করেছেন অনেকে। ফলে, এ দিনের অভিযানে বাধা আসতে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল। অভিযান চালানোর সময়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয় এলাকায়।
চোখের সামনে নিজেদের দোকান ভেঙে পড়তে দেখেন অনেক ব্যবসায়ী। প্রশাসনের তরফে পুনর্বাসনের দাবি আবারও তোলেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “এই ব্যবসার উপরে আমাদের সংসার নির্ভর করে থাকে। আমাদের জন্য কোনও বিকল্প বন্দোবস্ত করা দরকার।’’
ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অতিরিক্ত জেলাশাসককে ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প জমি দেওয়ার আবেদন করেছি।” অতিরিক্ত জেলাশাসক পার্থবাবু জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “প্রশাসন জমি দিলে ব্যবসায়ীদের জন্য পুরসভা স্টল বানিয়ে দেবে।” পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি যাতে দ্রুত হয় এ দিন সেই দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা।
আজ, রবিবার তামলিবাঁধ ময়দান সংলগ্ন অবৈধ নির্মান ভাঙা হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।