ভেলিয়ান গ্রামে অভিযুক্ত নেতার বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র
বিপিএল তালিকায় নাম থাকা স্বত্ত্বেও প্রকৃত দুঃস্থেরা ঘর তৈরির জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা পাননি। অথচ তিন তলা বাড়ি, জমিজমা থাকা স্বত্ত্বেও শাসকদলের নেতাকে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে অভিযোগ জানিয়েও কোনও কাজ না হওয়ায় ফের তদন্তের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন এক বাসিন্দা। ঘটনাটি ময়ূরেশ্বরের কানাচি পঞ্চায়েতের ভেলিয়ান গ্রামে।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে ভেলিয়ান গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের স্থানীয় বুথ কমিটির সম্পাদক তারাচাঁদ মণ্ডলের নামে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। সেই টাকা তাঁর পাশবইয়ের মাধ্যমে তিনি তুলেও নেন। নিয়মানুযায়ী, বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার ‘স্কোরের’ ক্রমানুসারে ওই প্রকল্পে টাকা পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তালিকাভুক্ত পরিবার আদৌ তা পাওয়ার যোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার পরে তার নামে টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করে পঞ্চায়েত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা আশুতোষ মণ্ডল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, গ্রামে বিপিএল ভুক্ত দুঃস্থ আদবাসী এবং তফশিলি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। তাঁদের বঞ্চিত করে শাসকদলের নেতা হওয়ার সুবাদে টিনের চালের তিনতলা বাড়ি, ৭ বিঘে জমি থাকা স্বত্ত্বেও তারাচাঁদবাবুকে বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অন্যের বাড়ির ছবি তুলিয়ে বরাদ্দ টাকা পুরোপুরি তুলেও নেওয়া হয়েছে। অথচ ইতিপূর্বে প্রশাসনের সকল স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আসলে যোগসাজশ করে সব ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।’’
একই অভিযোগ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অরূপ বাগেরও।
তিনি জানান, গ্রামে বহু গৃহহীন দুঃস্থ পরিবার রয়েছে। তাঁদের বঞ্চিত করে শাসক দলের অবস্থাপন্নদের বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারাচাঁদবাবু অবশ্য যোগসাজসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, ‘‘বিপিএল তালিকায় আমার নাম আছে এবং আমি যোগ্য বলেই আমার নামে বাড়ি তৈরির টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আমি বরাদ্দ টাকায় বাড়িও করেছি। এর আগেও প্রশাসনের কর্তারা তদন্ত করে সব দেখে গিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও ঠিক নয়। কারণ যখন ওই টাকা বরাদ্দ হয় তখন আমি দলের কোনও পদেই ছিলাম না। আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কারণেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
যোগ সাজসের অভিযোগ মানেননি সংশ্লিষ্ট কানাচি পঞ্চায়েতের প্রধান সুরভি মণ্ডলও। তবে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু মন্তব্য করব না।’’
তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ১ নং ব্লক সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের আর্থিকস্থিতির ক্রমানুসারে গ্রামোন্নয়ন সমিতির পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ী ওই যোজনায় টাকা বরাদ্দ হয়। বিপিএল তালিকা তৈরি হয়েছিল সিপিএমের আমলে, তাই আর্থিক সঙ্গতিসম্পন্ন হলে তারাচাঁদবাবুর নাম সেই তালিকাভুক্তির দায় আমাদের নয়। তিনি দুঃস্থ বলেই তো তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হয়েছিল। আর সেই কারণেই তাঁর নাম গ্রামোন্নয়ন সমিতি অনুমোদন করেছে।’’
সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ১ নং ব্লকের বিডিও সুশান্তকুমার বসু বলেন, ‘‘আগের অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে এখন যে অভিযোগ হয়েছে তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’