মুকুল রায়ের সঙ্গে সৌমিত্র। নিজস্ব চিত্র
বিষ্ণুপুরে এসেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। কয়েকজন জেলা তৃণমূল নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধি কী ভাবে হল, তা নিয়ে তিনি সব তথ্য ফাঁস করবেন বলে রবিবার হুঁশিয়ারিও দিলেন। সঙ্গত করলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে মুকুল বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরে একটা বড় সভা করুন। সেখানেই রোজভ্যালি ও জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে সব তথ্য আমি ফাঁস করব।” যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
গত জানুয়ারিতে ‘ফেসবুকে’ তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে সৌমিত্রর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে জলঘোলা হয়। তৃণমূল তাঁকে বহিষ্কার করে। সৌমিত্র যোগ দেন বিজেপিতে। এর পরে সৌমিত্রর বিরুদ্ধে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন থানায় স্কুলে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, অবৈধ ভাবে বালিখাদান চালানো, বেআইনি অস্ত্র রাখা, সাংসদ কোটার টাকা তছরুপের মতো অভিযোগ দায়ের হয়। সেই সব মামলা চলছে।
মামলার জেরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সৌমিত্রকে বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে নিষেধ করেছিল। ভোটের প্রচারেও তিনি বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে পারেননি। তাঁর হয়ে প্রচার করেছিলেন স্ত্রী সুজাতা খাঁ। নিজের কেন্দ্রে ভোট দিতেও আসতে দেখা যায়নি সৌমিত্রকে। সেই দিন তিনি দুর্গাপুরে বসে ফোনেই খবর নেন।
শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতেই সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, সাড়ে সাত মাসের বেশি সময় ধরে তিনি জেলায় ঢুকতে পারছেন না। রবিবার জেলায় ঢুকেই তিনি বিষ্ণুপুরে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ দিন সকালে তিনি স্ত্রী সুজাতা খাঁকে নিয়ে ডিহরের ষাঁড়েশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে যান। তারপরে বিষ্ণুপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন ছোট একটি জায়গায় তাঁরা সভা করেন।
সেখানে সৌমিত্র কয়েকজন জেলা তৃণমূল নেতার নাম করে দাবি করেন, ‘‘ওঁদের এত সম্পত্তি কী ভাবে হল, তা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নেব। আজ শুরু করলাম। আগামিকাল থেকে এলাকায় ঘুরে এঁদের সব তথ্য ফাঁস করব। আমি ভুলিনি তাঁদের কথা। প্রকল্পের টাকা লুট করে কে কী করেছে, তা আমার জানা আছে। তৃণমূল চোরের দল, দুর্নীতির দল।” তাঁর আরও দাবি, ‘‘চোরের দলে থেকে আমার যে পাপ হয়েছিল, তার প্রায়শ্চিত্ত করতেই বিজেপিতে আসা।”
জেলা পরিষদের মেন্টর তথা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমার সম্পত্তি সরকারে আসার অনেক আগে থেকেই। এটা নতুন নয়। বরং তিনি আগে নিজের মামলা সামলান।’’ সোনামুখীর পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘ফাঁকা আওয়াজ না দিয়ে সৌমিত্র বরং কেন্দ্রীয় সরকারের বড় বড় সংস্থাকে নিয়ে এসে তদন্ত করুন। তবে তার আগে নিজে যে ধোয়া তুলসি পাতা তা প্রমাণ করুন।’’
এ দিন মুকুল অভিযোগ করেন, তাঁরা যদুভট্ট মঞ্চে সভা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের শ্যাম মুখোপাধ্যায় তাঁদের ওই মঞ্চে সভার করার অনুমতি দেননি। শ্যামবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘যদুভট্ট মঞ্চ আমার ব্যক্তিগত জায়গা নয়। মঞ্চ কর্তৃপক্ষের এ দিন নিজস্ব সভা ছিল বলে অন্য কাউকে অনুমতি দেয়নি। মিথ্যা অভিযোগ তুলে লাভ হবে না। আমার বিরুদ্ধে তদন্তের ভয় দেখিয়েও লাভ নেই।’’