বইয়ে নজর।—নিজস্ব চিত্র।
সাঁওতালি বই সর্বত্র দোকানে পাওয়া যায় না। এই আক্ষেপ মেটাতেই সোমবার থেকে পুঞ্চায় লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজ চত্বরে শুরু হল দু’দিনের সাঁওতালি বইমেলা। পুরুলিয়া তো বটেই, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও অনেকে বই কাঁধে নিয়ে এখানে এসেছেন। সেই সঙ্গে আদিবাসী কিশোরীদের স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ শিবিরও শুরু হয়েছে। পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজ ও মানভূম আশ্রম নিত্যানন্দ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজন। চলবে আজ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত।
মেলার ২০টি স্টলে সাঁওতালি বইপত্র পর্যাপ্ত সংখ্যায় রয়েছে। অনেকে বইপত্র হাতে নাড়াচাড়া করেও দেখছেন। বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। বই না কিনলেও এই মেলা চত্বর ঘুরেও আনন্দ পাওয়ার যথেষ্ট উপকরণ এখানে রয়েছে। প্রতিটি স্টলই মাটির ঘরে খড়ের ছাউনি দিয়ে তৈরি। আদিবাসী সংস্কৃতির ভাবনার সম্পূর্ণ রূপ তুলে ধরতে তৈরি করা হয়েছে ছাউনি দেওয়া উঁচু বেদির গরাম থান। সেখানে রয়েছে ধামসা, মাদল। প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোঁয়া দিতে বড় চৌবাচ্চায় ফুটেছে লাল শালুক।
এই মেলার নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অবদান। মানভূম আশ্রম নিত্যানন্দ ট্রাস্টের প্রধান কর্তা তথা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ চেয়েছিল, আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি আদিবাসী কিশোরী মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন হোক। ওই দফতরের আর্থিক সহায়তায় দু’দিনের এই মেলা ও শিবির।’’
আর এ ভাবেই পুরুলিয়া জেলায় শুরু হল প্রথম সাঁওতালি বইমেলা। বই বিক্রেতারাও তাই মহাউৎসাহে স্টল সাজিয়ে বসে পড়েছেন। বোরো থানার দাড়িকাডোবা গ্রামের সুধীর টুডু বলেন, ‘‘আগে আমরা পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে সাঁওতালি বইমেলায় গিয়েছিলাম। বিক্রি খারাপ হয়নি। পুরুলিয়ায় সেই অর্থে এটি প্রথম সাঁওতালি বইমেলা। আশা করছি ভালই বিক্রি হবে।’’ বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থেকে অনিল মুর্মু বই নিয়ে এসেছেন। তাঁর মতে, ‘‘বাংলা বই যে কোনও জায়গায় পাওয়া যায়, কিন্তু সাঁওতালি বই সব বইয়ের দোকানে থাকে না। আমরা বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় ঘুরে ঘুরে বই বিক্রি করি। আলাদা ভাবে সাঁওতালি বইমেলা হলে সংস্কৃতির প্রসার হবে।’’ আবার বোরো থানার কুটনি গ্রামের জয়দেব সোরেন জানান, ইদানীং পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু বইয়ের দোকানেও সাঁওতালি বইপত্র রাখা শুরু হয়েছে। তবে ক্রেতারা পছন্দমাফিক বই কিনতে মেলাকেই ভরসা করেন।’’ এই মেলায় ব্যবসায়ীদের স্টল, আলো এবং দু’দিনের থাকা ও খাওয়ার জন্য কোনও খরচ করতে হচ্ছে বলে তাঁরা খুশি।
তবে বইমেলা হলেও এখানে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতনতাতেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি থেকে আসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানী কিঙ্কিনী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আদিবাসী কিশোরী মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতা ও মানসিক অবসাদ বেশি। এখানে মেয়েরা সচেতনতার পাঠ নিয়ে তাদের এলাকায় প্রচার করবে।’’ ট্রাস্টের অন্যতম কর্তা নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় জানান, পুঞ্চা, মানবাজার ১ ও মানবাজার ২ এবং বান্দোয়ান ব্লক থেকে ৬০ জন কিশোরী প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়েছে।
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, ডেপুটি সিএমওএইচ (২) গুরুদাস পাত্র , জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বিডিও অজয় সেনগুপ্ত, পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কৃষ্ণপদ মাহাতো, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রামশঙ্কর প্রধান প্রমুখ।