চলছে প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
যুব প্রজন্মের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না। দেখা দিচ্ছে নেতৃত্বের অভাব। এই পরিস্থিতিতে দলকে তুলে ধরতে বামফ্রন্টের ছত্রছায়ার বাইরে বেরিয়ে একক আন্দোলনের দরকার আছে বলেই মনে করছেন আরএসপি-র বাঁকুড়া জেলা নেতাদের অনেকেই।
এই আবহে আজ, শুক্রবার থেকে বাঁকুড়া শহরের কমরার মাঠ এলাকার একটি হল ঘরে শুরু হতে চলেছে আরএসপি-র ২১ তম রাজ্য সম্মেলন। উপস্থিত থাকবেন দলের রাজ্য নেতারা। আরএসপির বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য গঙ্গা গোস্বামী বলেন, ‘‘আমাদের একক ভাবে কর্মসূচি নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এই বিষয়টি আমরা সম্মেলনে তুলব।’’
সম্মেলনের আয়োজন করা নিয়েও জেলায় জলঘোলা হয়েছে। সম্মেলনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্রভবন ভাড়া চেয়ে আবেদন করেছিল আরএসপি। যদিও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। গোটা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেই দাবি করছেন আরএসপির বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক। তাঁর দাবি, “তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কোনও রকম কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারছে না। তাই প্রশাসন আমাদের রবীন্দ্রভবন হল ঘরে সম্মেলন করার অনুমতি দেয়নি।” তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বাম আমলেই প্রশাসনকে ব্যবহার করা হতো। আমরা মোটেই তা করি না। বাম দলগুলির আগো জোনাল সম্মেলনে যা লোক হতো, এখন রাজ্য সম্মেলনে তত লোক হয় না। ওদের গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে?’’ জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘এ রকম অভিযোগ ঠিক নয়। আগে যে ‘বুক’ করে, তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’’
বাম আমলে বাঁকুড়া জেলায় বিধায়ক থেকে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে আরএসপি-র বেশ কিছু প্রতিনিধি থাকতেন। কিন্তু, রাজ্যে পালাবদলের পরে অনেকটাই জমি হারিয়েছে দল।
আরএসপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখন শুধু ছাতনা, ওন্দা, শালতোড়া ও ইঁদপুরেই জোনাল কমিটি টিকিয়ে রাখা গিয়েছে। দলের সদস্য সংখ্যা এই মুহূর্তে প্রায় ১২০০। গত কয়েক বছরে যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতেও জেলায় আরএসপি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে বলে মানতে নারাজ নেতৃত্ব। গঙ্গাবাবু উদাহরণ টানেন, ছাতনা ব্লক বরাবরের আরএসপি ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০১১ সালে ছাতনা বিধানসভা হাতছাড়া হয় তাঁদের। যদিও ২০১৬ সালে ফের আরএসপির দলীয় প্রতীকের প্রার্থীই জয়ী হয়েছিলেন।
তাঁর অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাসের জন্য ছাতনা ব্লকে সে ভাবে প্রার্থী দিতে পারেননি তাঁরা। কেবলমাত্র ছাতনা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে এক জন প্রার্থী দেওয়া গিয়েছিল। তিনি জয়ীও হয়েছেন। গঙ্গাবাবু বলেন, “এখান থেকেই স্পষ্ট সাধারণ মানুষের কাছে আরএসপির জনপ্রিয়তা কমেনি। গণতান্ত্রিক ভাবে ভোট হলে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটেই ছাতনায় বহু পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসন আমাদের দখলে আসত। তবে সংগঠন দুর্বল হচ্ছে এটা মানতে বাধা নেই।”
সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ার জন্য দলের পন্থাকেই অনেকাংশে দুষছেন আরএসপির জেলা নেতারা। তাঁদের কথায়, আরএসপি-র একক ভাবে আন্দোলনে নামা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। আন্দোলন যেটুকু হয় তা বামফ্রন্টগত ভাবে। সেখানে আরএসপির নাম সে ভাবে উঠেই আসে না।
এক জেলা নেতা বলেন, “সিপিএম বা ফরওয়ার্ড ব্লক ও তাদের গণসংগঠনগুলি প্রায়ই একক ভাবে নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এখানেই আমাদের ঘাটতি রয়েছে। বামফ্রন্টগত ভাবে আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি একক ভাবেও কর্মসূচি নিতে হবে। তা না হলে দলটার অস্তিত্বের মালুম সাধারণ মানুষ পাবেন কী ভাবে?’’ জেলার আর এক আরএসপি নেতার ক্ষোভ, “আমাদের গণসংগঠনগুলির নামই ভুলতে বসেছেন সাধারণ মানুষ। এর কারণ একক ভাবে কর্মসূচি না নেওয়া।” দলের কিছু নেতার এই যুক্তি উড়িয়ে দিচ্ছেন না গঙ্গাবাবুও। তিনি বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ ছাত্র ও যুব প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে দলের আদর্শ তুলে ধরা। তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। কোন পন্থায় আমরা তাদের কাছে যাব, তা নিয়ে সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।”