ভরসা: বাঁকুড়া শহরের রাস্তায় সোমবার। নিজস্ব চিত্র
শহরে ই-রিকশার (টোটো) উপর লাগাম টানতে কড়া নিয়ম জারি করেছিল প্রশাসন। যার বিরুদ্ধে সরব হয়ে রাস্তায় টোটো নামানোই বন্ধ করে দিয়েছিলেন চালকেরা। অবশেষে অবস্থান বদলে অনেকটাই নরম হল প্রশাসন। অন্য দিকে, দু’দিন শহরে টোটো না চলায় দর চড়েছে রিকশার।
সম্প্রতি বাঁকুড়া শহরে অভিযান চালিয়ে রেজিস্ট্রেশন না হওয়া বেশ কিছু টোটো আটক করেন করেন মহকুমা শাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। শুক্রবার দফতরে টোটো চালকদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দেন, আটক টোটোর বড়সড় জরিমানা হবে। নির্দেশ দেন, মালিক ভাড়ায় অন্য কাউকে টোটো চালাতে দিতে পারবেন না।
এই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন টোটো চালকেরা। বাঁকুড়া ই-রিকশা ওনার্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি দেবাশিস তেওয়ারি অভিযোগ তোলেন, সরকার স্বীকৃত টোটো কিনে আরটিও-তে হত্যে দিতে পড়ে থাকেন মালিকেরা। কিন্তু নানা জটিলতায় দফতর রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না। আটক টোটো বিনা জরিমানায় ছাড়ার দাবি তোলা হয়। ভাড়া না দেওয়ার নিয়মও বদলানোর কথা বলেন তাঁরা।
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার থেকে শহরে টোটো বন্ধ ছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় মহকুমা শাসকের দফতরে নিজেদের দাবি জানান টোটো চালকেরা। মঙ্গলবারও সকাল থেকে শহরের রাস্তায় টোটো নামেনি।
এ দিন দুপুরে মহকুমা শাসক ফের টোটো চালকদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন। সেখানে তিনি জানান, আটক বৈধ টোটোগুলির দফতরের জটিলতায় রেজিস্ট্রেশন না হয়ে থাকলে সেগুলির জরিমানা হবে না। তবে যেগুলির রেজিস্ট্রেশন করানোর চেষ্টাই হয়নি, সেগুলির জন্য জরিমানা দিতে হবে। টোটো ভাড়ায় চালাতে দিলে মালিক এবং চালকের মধ্যে স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত চুক্তি করতে হবে দু’বছরের জন্য। সেই চুক্তিপত্র মহকুমা শাসকের দফতরে জমা পড়ার পরে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে কি না।
টোটো চালক সংগঠনের সহ-সভাপতি দেবাশিসবাবু এ দিন বলেন, “মহকুমাশাসক আমাদের দাবির তাৎপর্য বুঝে সিদ্ধান্ত কিছুটা বদল করায় আমরা খুশি।’’ মহকুমাশাসক জানান, বাঁকুড়া শহরে রেজিস্ট্রেশন না হওয়া ৩৫০টি বৈধ টোটোকে শীঘ্রই রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আরটিও-কে। তিনি বলেন, “আমরা চাই টোটো বৈধ ভাবে রুট মেনে চলুক। চালকদেরও এ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। সমস্ত বৈধ টোটোর রেজিস্ট্রেশন যাতে দ্রুত হয় সে দিকে আমরা নজর দিচ্ছি।”
এ দিকে দু’দিন শহরে টোটো না চলায় ফের রিকশা চালকদের ভাড়া নিয়ে জোরাজুরি বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বাঁকুড়া শহরের সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা অমিত খান বলেন, “বাড়ি থেকে খ্রিস্টান কলেজ গিয়ে ফিরে আসতে অন্য দিন রিকশা ভাড়া লাগে চল্লিশ টাকা। এ দিন আশি টাকার কমে কোনও রিকশা চালক যেতে রাজি ছিলেন না। বলতে গিয়ে শুনতে হল, ‘কেন? টোটোতে যান’। অগত্যা সেই দ্বিগুণ ভাড়াই দিতে হল।’’ এমন অভিযোগ অনেকেরই।
তবে দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, আজ, বুধবার থেকেই ফের পুরোদমে টোটো চলাচল শুরু হবে শহরে।