মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
ডেউচা-পাঁচামি কয়লা খনির অগ্রগতি দেখতে শুক্রবার মুখ্যসচিবের সফরকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন এলাকার বাসিন্দা, বিশেষত জমিদাতারা। তাঁদের মনে করছেন এ বার সত্যিই খনি গড়ায় হাত পড়তে চলেছে।
বীরভূমে এসে মহম্মদবাজারের ওই প্রস্তাবিত কয়লা খনি সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকের করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ওঁর সঙ্গী ছিলেন, রাজ্য পুলিশের ডিজি, খনি গড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পিডিসিএলের এমডি পি বি সালিম-সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। জানা গিয়েছে। খনির প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করতে ৩২৬ একর জমি চিহ্নিত হয়েছে। প্রথমে কয়লা ভান্ডারের উপরে মজুত কালো পাথর (ব্ল্যাক স্টোন) তোলা শুরু হবে। খোলা মুখ হবে, না কি ভূগর্ভস্থ মাইনিং সেটা স্পষ্ট নয়। তবে রাজ্য সরকারের ভাবনায় ভূগর্ভস্থ মাইনিংয়ের বিষয়টি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর আশাবাদী জমিদাতারা। নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দা, প্রস্তাবিত কয়লাখনি এলাকায় জমিদাতা বিমল দাস ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি চাকরিও পেয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা যখন এসেছেন মনে হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া গতি পাবে। ইতিবাচক বলেই মনে করছি।’’ প্রায় একই বক্তব্য দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা ছুতোর টুডুর। প্রস্তাবিত কয়লাখনির জন্য অনেকটা জমি দিয়েছেন তিনি। সে জন্য তাঁর দুই ছেলে মেয়ে গ্রুপ-ডি পদে চাকরি পেয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘এ বার খনিটা হবে মনে হচ্ছে।’’ কেন্দ্রপাহাড়ি গ্রামের আরেক জমিদাতা বিদ্যুৎ রায়ের বক্তব্য, ‘‘সরকার যে কথা দিয়েছিল, এখনও পর্যন্ত সেভাবেই চলছে। চাকরিও পেয়েছি। সরকার কয়লাখনি গড়তে চাইছে বলেই মুখ্যসচিব-সহ প্রশাসনের বড়কর্তারা এসেছিলেন।’’
প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, ডেউচা –পাঁচামিতে খনি বিরোধী কোনও আন্দোলন এখন নেই। বরং দ্রুত জমি কিনে চাকরি দেওয়া হোক সেটাই চাইছেন এলাকার মানুষ। তার প্রমাণও মিলেছে মুখ্যসচিবের সফরের দিনেই। মুখ্যসচিব মহম্মদবাজার ব্লক অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, কেন তাদের ডাকা হয়নি অভিযোগ তুলে সোঁতসাল বাসস্ট্যান্ডের পাশে পানাগড়-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কে কিছুক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ করেন ‘বঞ্চিত ডেউচা পাঁচামি সংগ্রাম কমিটি’র সদস্যেরা। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য মিনাজউদ্দিন বলছেন, ‘‘আমাদের মূল দাবি, প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকার মধ্যে যাঁদের বৈধ জমি রয়েছে, তাঁদের জমি দ্রুত নিতে হবে এবং চাকরি দিতে হবে।’’
মিনাজ উদ্দিন জানাচ্ছেন, এখন দু’টি বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। প্রথমত, যেখানে প্রথম পর্যায়ে শিল্প হবে, ঠিক হয়েছে সেখানে জমি নেওয়া হয়নি। অথচ অন্য জায়গা থেকে জমি কেনা ও চাকরি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জমির ষোলোআনা মিল (অর্থাৎ যে জমির রেকর্ড ঠিক আছে) করার অজুহাতে দীর্ঘদিন অপক্ষায় থাকতে হচ্ছে মানুষকে। কমিটির দাবি, প্রশাসনের এই দু’টি বিষয় দেখা দরকার।
ডেউচা–পাঁচামিতে কেন ‘খাপছাড়া’ জমি কেনা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্নে নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়কে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কী ভাবে কাজ এগিয়েছে মুখ্যসচিবকে সবিস্তারে সেটা জানানো হয়েছে। এও জানানো হয়েছে বীরভূমের বর্তমান জেলাশাসকের নেতৃত্বেই সেটা সম্ভব হয়ছে।
প্রশাসনের সূত্রের দাবি, বলা হয়েছে প্রথম দিকে খনি বিরোধিতার সুর ভাল মাত্রায় ছিল। সেই সময় মানুষের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু জমি নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় কোথায় কত কয়লা রয়েছে সেটা জানতে সমীক্ষা চালানো যেত না। প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মুখ্যসচিব সেটা বুঝেছেন।
প্রথম পর্যায়ে খনি গড়ার জন্য এখন যে এলাকাটি চিহ্নিত হয়েছে সেই এলাকায় ৯৮০টি গাছ রয়েছে। মূলত মহুয়া, শাল ও সামান্য কিছু অর্জুন গাছ রয়েছে। সেই কাজ শুরুর আগে ওই গাছগুলি না কেটে অন্যত্র প্রতিস্থাপন করা হবে। যাতে শুধু এলাকার বাসিন্দারাই নন, শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে যে প্রকৃতির কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে, সেই বার্তা যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সে জন্য এ ব্যাপারে দক্ষতা রয়েছে এমন সংস্থার খোঁজে দরপত্র ডাকা হয়েছে।