Ravana Kata Dance of Bishnupur

পুজো মিটতেই রাস্তায় হনুমান, জাম্বুবান! রাবণ কাটা নাচের আনন্দে উদ্বেল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর

রামচন্দ্রের হাতে রাবণ বধের পর বানরসেনা উৎসবে মেতে উঠেছিল। সেই উৎসবে বানরসেনা যে নাচ নেচেছিল, বীররসের সেই নাচকে স্মরণ করে মল্ল রাজারা বিষ্ণুপুরে চালু করেছিলেন রাবণ কাটা নাচ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:০১
Share:

বাঙালির নিজস্ব দসেরা ‘রাবণ কাটা’ নাচে মাতোয়ারা মল্লভূম। — নিজস্ব চিত্র।

পুজো মিটেছে। কিন্তু পুজোর আনন্দ শেষ হওয়ার নাম নেই। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মানুষ দশমী থেকেই মেতে উঠলেন অন্য এক উৎসবে। সৌজন্যে ‘রাবণ কাটা’ নাচ। শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুগ্রীব, জাম্বুবান, বিভীষণ এবং হনুমান। কাড়া, নাকাড়া-সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে কখনও গলির মোড়ে, আবার কখনও গৃহস্থের দোরে দোরে ঘুরে বিশেষ ভঙ্গিতে নাচ দেখিয়ে বিষ্ণুপুরের মানুষকে আনন্দ দিয়ে চলেছেন ওই চার ‘রামসেনা’। বিষ্ণুপুরের বুকে একে বারে ভিন্ন ধারার এই নাচেরই পোষাকি নাম, রাবন কাটা নাচ।

Advertisement

মল্লভূমের প্রাচীন রাজধানী বিষ্ণুপুর। এই বিষ্ণুপুরের বুকে এক হাজারেরও বেশি বছর ধরে শাসন চালিয়েছেন মল্ল রাজারা। সংস্কৃতিপ্রিয় সেই মল্লরাজাদের আনুকূল্যে বিষ্ণুপুরে যেমন বিকশিত হয়েছে সঙ্গীতের বিষ্ণুপুরী ঘরানা, তেমনই এই বিষ্ণুপুরের বুকেই ডালপালা মেলেছে রাবন কাটা নাচের মতো ভিন্ন ধারার নৃত্যশৈলীও। রামায়ন বলে, রামচন্দ্রের হাতে রাবণ বধের পর বানরসেনা উৎসবে মেতে উঠেছিল। সেই উৎসবে বানরসেনা যে নাচ নেচেছিল, বীররসের সেই নাচকে স্মরণ করে মল্ল রাজারা বিষ্ণুপুরে চালু করেছিলেন রাবণ কাটা নাচ।

দশমী থেকে চার জন পুরুষ নৃত্যশিল্পী বিশেষ পোষাক পরে সঙ সাজেন। বিভীষণ, সুগ্রীব, জাম্বুবান এবং হনুমান— এই চার ধরনের সঙ সেজে তাঁরা দশমী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত শহরের পথে পথে এবং গৃহস্থের বাড়িতে নাচ দেখিয়ে বেড়ান। দশমীর সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুরের রঘুনাথ মন্দিরে ইন্দ্রজিৎ বধের অনুষ্ঠান হয়। একাদশী এবং দ্বাদশীতে যথাক্রমে হয় কুম্ভকর্ণ এবং রাবণ বধের অনুষ্ঠান। শহরের রাস্তায় রাস্তায় নাচ দেখানোর পাশাপাশি, এই তিনটি অনুষ্ঠানেই হাজির থাকেন সঙ সাজা শিল্পীরা। রঘুনাথ মন্দিরে দ্বাদশীর সন্ধ্যায় রাবণ বধ হলে থামে শিল্পীদের নাচ। এ ভাবেই বছরের পর বছর ধরে বিষ্ণুপুরে টিকে রয়েছে প্রাচীন সংস্কৃতির এই ধারাটি। শোনা যায়, এক সময় খুশি হয়ে মল্ল রাজারা শিল্পীদের মোহর ও অন্যান্য উপঢৌকন দিতেন। এখন রাজারা নেই। নেই রাজ্যপাটও। কিন্তু রাবণ কাটা নাচ নিজস্ব গরিমা নিয়ে টিকে আছে বিষ্ণুপুরের বুকে।

Advertisement

রাবণ কাটা নাচের দলের প্রধান সুকুমার অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দশমী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত এই নাচ দেখিয়ে বিষ্ণুপুরের মানুষকে আনন্দ দিয়ে আসছি। বর্তমানে রাজ্য সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে শিল্পীভাতার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু যে ভাবে দিনের পর দিন পোশাকের পিছনে খরচ বাড়ছে তাতে বছর ভর অর্থকষ্টে ভূগতে হয়। তবু শিল্প টিকিয়ে রাখার তাগিদে আজও রাবণ কাটা নাচ বাঁচিয়ে রেখেছি।’’ মল্ল রাজ পুরোহিত সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাস্ত্রমতে রামচন্দ্রের হাতে রাবণ বধের পর দ্বাদশীর দিন রাবণের দেহ পোড়ানো হয়। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে বিষ্ণুপুরের রঘুনাথ জিউর মন্দিরে দ্বাদশীর দিন রাবণ পোড়া উৎসব হয়ে আসছে। সেই উৎসবের অনুসঙ্গ হিসাবে এই রাবণ কাটা নাচের সূচনা করেছিলেন মল্ল রাজারা। অতীতের সেই পরম্পরা আজও বজায় আছে মল্ল রাজধানীতে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement