এ বার আর চাকা গড়াবে না হেতমপুর রাজবাড়ির পিতলের রথের। নিজস্ব চিত্র
করোনা থামিয়ে দিল হেতমপুর রাজবাড়ির শতাব্দী প্রাচীন রথের চাকা। এ বার আর রাস্তায় নামবে না রথ। ‘‘করোনা আবহে জনসমাগম এড়াতেই শতাব্দী প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব এ বার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’’, বলছেন হেতমপুর রাজপরিবারের সদস্য তথা ব্রজবালা ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি সুরঞ্জন চক্রবর্তী।
কন্টেনমেন্ট জোন ছাড়া লকডাউন উঠে গেলেও করোনা সংক্রমণ থামার লক্ষণ নেই। এ কথা মাথায় রেখে মাহেশের ৬২৪ বছরের রথযাত্রা উৎসব এ বার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাহেশের জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ। সে কথা স্মরণ করিয়ে সুরঞ্জনবাবু বলছেন, হেতমপুর রাজপরিবারের রথকে ঘিরে গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে একটা উদ্দীপনা রয়েছে। রথ হলেই জনসমাগম হবে। সেখানে পারস্পরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা সম্ভব নয়। তবে রথ বের না হলেও গৌরাঙ্গ মন্দিরে পুজোপাঠ হবে।
জেলায় ঐতিহ্যবাহী রথের তালিকায় অন্যতম হেতমপুর রাজবাড়ির রথ। ইংল্যান্ডে তৈরি হেতমপুর রাজবাড়ির পিতলের রথ দেখে মনে হয় যেন সোনার তৈরি। রাজপরিবারের ইতিহাস বলছে, বাংলা ১২৫০ সালের আশপাশে হেতমপুরের রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তী ইংল্যাণ্ডের স্টুয়ার্ট কোম্পানিকে দিয়ে রথটি বানিয়েছিলেন। রথটি তৈরি হয়েছিল রাজপরিবারের গৌরাঙ্গ মন্দিরের গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দের জন্যই। প্রথা অনুযায়ী গৌরাঙ্গ নিত্যানন্দের বিগ্রহ তোলা হতো রথের দিন। মন্দিরের খরচ চালানোর জন্য ব্রজবালা ট্রাস্ট গড়ে দিয়েছিলেন রাজা রামরঞ্জন। রথের খরচ চলত ব্রজবালা ট্রাস্টের উপরেই।
সেই সুদিন অবশ্য গিয়েছে অনেকদিন। তবে রাজাদের রথের বিশাল আড়ম্বরের ছবি এখনও এলাকাবাসীর মুখে মুখে ফেরে। তাঁদের মনে পড়ে, শোভাযাত্রার একেবারে সামনে থাকত বিশাল আকৃতির সুসজ্জিত একটি সাদা ঘোড়া ও তার ঘোড়সওয়ার। পিছনে আরও চারটি সুসজ্জিত ঘোড়া। রূপোর দণ্ডের উপর পতাকা লাগিয়ে দুপাশে লাইন করে এরপর থাকত সুবেশ পাইকেরা। এরপর একে একে নানা ধরেনের বাজনার দল। শোভাযাত্রা শেষ ভাগে থাকত মূল আকর্ষণ পিতলের তৈরি পাঁচটি চূড়া বিশিষ্ট সুদৃশ বিশাল রথ। রাজাদের গৌরাঙ্গ মন্দির থেকে বিগ্রহ নিয়ে বেরিয়ে, রঞ্জন প্যালেস (রাজবাড়ি) ছুঁয়ে রথ যথন গ্রামের অন্য প্রান্তে রাধাবল্লভ মন্দিরে যেত, রাস্তায় তখন উপচে পড়ত ভিড়। পিছনে,সামনে, দু’পাশে তখন কাতারে কাতারে মানুষ। জৌলুস কমলেও রথকে ঘিরে উদ্দীপনা একই রয়ে গিয়েছে। ভিড়টাও একই থাকে প্রতি বছর। সেই ছবিটাই এ বার দেখা যাবে না। এলাকার মানুষ অবশ্য বলছেন, খারাপ লাগলেও সংক্রমণের আশঙ্কা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত ঠিক।