আঁধারেই ডুবে ইতিহাস

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বৈষ্ণব ধর্মের প্রসারের জন্য ষোড়শ শতকে রাজা বীর হাম্বির বিষ্ণুপুরে এই স্থাপত্য তৈরি করেছিলেন।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
Share:

ঘুটঘুটে: বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে আলো। সন্ধ্যা নামলে অন্ধকার হয়ে থাকে বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য রাসমঞ্চ। ছবি: শুভ্র মিত্র

সন্ধ্যা নামে বিষ্ণুপুর শহরে। ‘হাইমাস্ট ল্যাম্প’ আর ত্রিফলায় লাগানো আলোয় ঝলমল করে গলিঘুঁজি। এ দিকে, চাপ চাপ অন্ধকার রাসমঞ্চকে ঘিরে।

Advertisement

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বৈষ্ণব ধর্মের প্রসারের জন্য ষোড়শ শতকে রাজা বীর হাম্বির বিষ্ণুপুরে এই স্থাপত্য তৈরি করেছিলেন। একটি চত্বরে রয়েছে চারটি মন্দির—রাসমঞ্চ, জোড়বাংলা, শ্যামরাই এবং রাধেশ্যাম। পর্যটকদের কাছে মন্দির-নগরীর অন্যতম আকর্ষণ মাকড়া পাথর আর পোড়া ইটের স্থাপত্যগুলি। রাসমঞ্চের ছবিই রাজ্য পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইটে বিষ্ণুপুরের পাতার ‘ব্যানার’।

মন্দির-শহরে পর্যটনের প্রসারে প্রশাসন নানা নতুন প্রকল্প নিচ্ছে। তার পরেও চোখের সামনে বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে রাসমঞ্চ। প্রায় তিন বছর ধরে দামী দামী আলো পড়ে নষ্ট হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন করছেন, কিছু করা হল না কেন? আবার পর্যটক এবং গাইডদের কারও কারও প্রশ্ন, রাসমঞ্চ দেখার জন্য টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও কেন মিলবে না পুরো পরিষেবা?

Advertisement

প্রবীণ পুরাতত্ত্ব গবেষক চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, “অনেক চিঠি লেখার পরে ২০১১ সালে রাসমঞ্চের চারটি মন্দিরে আলো আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বাজানোর ব্যবস্থা করেছিল পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও মহকুমা প্রশাসন। ২০১৫ সালে আচমকা তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যন্ত্রপাতি হয়তো মেরামতির অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

কেন? মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাতিগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজ্য পর্যটন দফতর থেকে টাকা আসত। বছর তিনেক আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। মেটানো যায়নি বিদ্যুতের বিল। সেই থেকেই আঁধার ঘনিয়েছে রাসমঞ্চে। প্রশাসনের কর্তাদের কারও কারও অভিযোগ, পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও পর্যটন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের ফলে হয়েছে এমনটা।

মাস দু’য়েক আগে বিষ্ণুপুরে এসে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব আশ্বাস দিয়েছিলেন, আবার আলো জ্বলবে মন্দিরগুলিতে। তার পরে কাজ কত দূর এগোল? মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, “আমরা আবেদন করেছিলাম। পর্যটন দফতর ২ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে পাঠিয়েছে।” তিনি জানান, সেই টাকায় মেটানো হয়েছে বিদ্যুতের বিল। ফের বাতি জ্বালানোর জন্য ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি করে জমা করা হয়েছে পর্যটন দফতরে।

মহকুমাশাসক বলেন, “পর্যটন দফতর থেকে আশ্বাস মিলেছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি আগের মতো আলো আর সঙ্গীত চালু হয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement