নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই রামপুরহাট শহরের রাস্তায় দাপাচ্ছে অটো-টোটো। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
কে কার কথা শোনে? এ যেন কে কত নিয়ম ভাঙতে পারে তার খেলা চলছে। জাতীয় সড়ক থেকে শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা— কোথাও
নজরদারি নেই। টোটো-অটো ছুটে চলেছে অবাধ গতিতে। আর সেই দৌরাত্ম্যেতে অতিষ্ঠ শহরবাসী।
কী রকম সেই দৌরাত্ম্য?
শহর থেকে একটু দূরে রামপুরহাট হাসপাতাল পাড়া এলাকার কথা ধরা যাক। জাতীয় সড়কের উপর সাদা দাগের বাইরে পথচারীরা হাঁটবেন, এটাই নিয়ম। হাসপাতালের সামনে এলাকা থেকে জাতীয় সড়ক ধরে ভাঁড়শালাপাড়া মোড় পর্যন্ত আসার পথে দেখা যাবে জাতীয় সড়কে সাদা দাগের ভিতর অধিকাংশ টোটো বিভিন্ন নার্সিং হোম, প্যাথলজি সেন্টার, ওষূধের দোকান, চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসা যাত্রীদের ওঠা নামা করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কোনও কোনও চালক জাতীয় সড়কের উপর ডাইনে বাঁয়ে না দেখে ঝট করে বাঁক ঘুরে যাত্রী ওঠাচ্ছেন। হাসপাতালের সামনে এলাকায় সেই যাত্রী বোঝাই নিয়ে টোটো চালক দের মধ্যে হামেশাই ঝামেলাও হয় বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং দোকানদার রা। টোটোর দৌরাত্ম্যে সামনে পিছনে বাস, ট্রাক, অন্যান্য যানবাহন যানজটে দাঁড়িয়ে আছে।
হাসপাতাল পাড়া ছাড়িয়ে জাতীয় সড়কের উপর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ভাঁড়শালাপাড়া মোড় ঘুরে দেখা গেল একই ছবি। ভাঁড়শালাপাড়া এলাকায় চৌরাস্তা জুড়ে টোটোর দাপট ট্রাফিক দাঁড় করিয়ে রাখলে টোটোর লম্বা লাইন পড়ে যায়। জাতীয় সড়কের উপর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেল মিনিটে দশটা করে টোটো চলাচল করছে। যাত্রী পেলেই ডাইনে বাঁয়ে দেখার আগে প্যাসেঞ্জার ধরার জন্য জাতীয় সড়কেই বাঁক ঘুরিয়ে ছুটছে টোটো।
মকবুল শেখ নামে একজন টোটো চালক বললেন, ‘‘জাতীয় সড়কের উপর সবাই তো চালাচ্ছে, আমি একা বন্ধ করলে হবে?’’ মকবুলের বাড়ি রামপুরহাট জয়কৃষ্ণপুর এলাকায়। মকবুলের সঙ্গে কথা বলতেই জাতীয় সড়কে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা রামপুরহাট থানার চন্দনকুণ্ঠা, বিনোদপুর, দখলবাটি এই সমস্ত এলাকার টোটোচালকরা জানালেন, আগে তাঁরা ভ্যান রিকশা চালাতেন। মাস ছয়েক আগে টোটো কিনেছেন। গ্রামের যাত্রীদের নিয়ে শহরে বাজারে হাসপাতালে আসেন তাঁরা। রামপুরহাট শহরের এক টোটো চালক জানালেন, ‘‘প্রশাসনের উচিত গ্রাম থেকে আসা শহরের ভিতর নিয়ম না মেনে চলা টোটো চালানো বন্ধ করা। কারণ রামপুরহাট শহরে যানজটের মূল কারণ গ্রামের টোটো।’’
শহরবাসীর অভিযোগ শহরে নিয়ম অনুসারে দেশবন্ধু রোড, ব্যাঙ্ক রোড ধরে টোটো চলাচল করবে। ডাকবাংলা মোড় থেকে ধূলাডাঙা মোড় হয়ে টোটো চলাচল করবে না। অধিকাংশ টোটো চালক সেই নিয়ম না মেনে ছোট ছোট গলি দিয়ে টোটো নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে কামারপট্টি মোড়, ব্যাঙ্ক রোড, মহাজন পট্টি মোড়, দেশবন্ধু রোড, ছফুঁকো মোড় সংলগ্ন এলাকায় যানজট হচ্ছে। শহরের বাসিন্দা বাদল মণ্ডল, শ্যামল মজুমদাররা জানালেন, ‘‘অফিসের সময়ে, স্কুলের সময়ে টোটোর অত্যাচারে গলি থেকে মূল রাস্তায় চলাচল করা দায়।’’
পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি জানান, শহরের ভিতরে টোটো চালকদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শহরের ভিতরে যাতে নির্দিষ্ট রুটে টোটো চলাচল করে সে জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রামের টোটো ও শহরের টোটো
চিহ্নিত করা যায় নি। তাঁর কথায়, ‘‘এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের টোটো চালকরা নিয়ম না মেনে শহরের ভিতরে চলাচল করার জন্য যানজট বাড়ছে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, টোটো চলাচলের নিয়ন্ত্রণের নজরদারি বাড়ানো হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে যে সমস্ত টোটো আসছে তাঁদের উপর নজরদারি বেশি করে রাখা হবে।