ওন্দার পথে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধে মিছিল ও সভা করে ক্ষোভ জানালেন দলেরই একাংশ। মঙ্গলবার ওন্দার ওই ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি বেড়েছে। এ দিন সকালে ওন্দার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি অরূপ খাঁয়ের বিরুদ্ধে পোস্টার হাতে মিছিল করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরএকাংশ। দলের ওন্দার প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতিরাও ছিলেন। পথসভা করেও অরূপের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সরব হন তাঁরা।
তৃণমূলের ওন্দার প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোকের অভিযোগ, “প্রাক্তন বিধায়ক ভোটে হেরেও ওন্দা ব্লকের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। তিনি ওন্দার বাসিন্দাও নন। অথচ নিজের পছন্দের লোককে ব্লক সভাপতি বানিয়েছেন। দলের ওন্দা ব্লক কমিটি ও অঞ্চল সভাপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বজনপোষণ করেছেন। ওঁকে অবিলম্বে ওন্দার রাজনীতি থেকে না সরালে দলে ভাঙন অনিবার্য।”
পঞ্চায়েত ভোটেও এর বড় প্রভাব পড়তে চলেছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, “আমরা দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আগেই লিখিত ভাবে অরূপের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম, দলের কোনও কর্মীকে নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই। অরূপের জন্যই বিভিন্ন সমস্যা ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হচ্ছে এলাকায়। কিন্তু দল কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় পথে নামতে বাধ্য হয়েছি।” অভিযোগ অস্বীকার করে অরূপের দাবি, “যাঁরা গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির জামা পরেছিলেন, এ দিন তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন। এখন জেলা সভাপতি বা বিধায়ক নই। ফলে দলে কোনও প্রভাব খাটানোর প্রশ্নই ওঠে না।”
তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়ায় অস্বস্তি এড়াতে পারছে না দলীয় নেতৃত্ব। কেন এই ক্ষোভ? দলীয় কর্মীদের একাংশের দাবি, অরূপের বিরুদ্ধে একাংশের ক্ষোভ বরাবরই ছিল। এর পরে ব্লক সভাপতি-সহ ওন্দার ১৫টি অঞ্চলের মধ্যে ১২টিতে সভাপতি বদলের জেরে অরূপের ‘বিরোধী’-পক্ষ খানিক কোণঠাসা।
এ দিকে, রাজ্যের তরফে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রতিটি সংসদ থেকে তিন জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা ব্লক থেকে পাঠাতে বলা হয়েছে। সেই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে সকলের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি। এ দিনের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া এক কর্মীর হুঁশিয়ারি, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অরূপকে ওন্দার রাজনীতি থেকে না সরালে আমরা কোথাও নির্দল প্রার্থী কোথাও আবার বিজেপি বা বাম প্রার্থীদেরও সমর্থন করতে পারি।”
ওন্দা ব্লক তৃণমূল সভাপতি উত্তমকুমার বিট বলেন, “ব্লক সভাপতি, ব্লক কমিটি ও অঞ্চল সভাপতির অদল-বদল হয়েছে রাজ্যের নির্দেশে। সেখানে ব্যক্তিগত ভাবে কোনও নেতার প্রভাব নেই। দলের সমস্ত কাজ সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হচ্ছে। তার পরেও এই ধরনের কর্মসূচি কেন করা হল, জানি না। গোটা ঘটনাটি জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “দল-বিরোধী কাজ হয়েছে। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। রাজ্যকে সব জানানো হয়েছে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার, দল নেবে।”