ট্রাকে কি বাড়তি বালি ভরা হয়েছে? খোঁজ নিতে কর্মীকেই তুলছেন সেচমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বালির বেআইনি কারবার বন্ধ করতে রাজনৈতিক রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বোলপুরে এসে জেলার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বোলপুর লাগোয়া বর্ধমানের আউশগ্রামে অজয়ের ভেদিয়া ঘাট থেকে হাতেনাতে বেআইনি বালির ট্রাকও ধরেন এ দিন। বাজেয়াপ্ত করেন বালি তোলার যন্ত্রপাতি।
মন্ত্রী জানান, এই বেআইনি কারবার বন্ধে জেলাগুলিতে টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। আচমকা অভিযান ও সীমানা এলাকার জেলাগুলিতে পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে বালি তোলা বন্ধের ব্যাপারে সেচ দফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ বোলপুরে পৌঁছন রাজীব। বোলপুর মহকুমাশাসকের দফতরে প্রশাসনের কর্তা ও জন প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠকের শেষে মন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই, বালির কারবার হোক স্বচ্ছতার সঙ্গে। জেলায়-জেলায় যাতে সমন্বয় থাকে সে জন্য ঘুরে-ঘুরে বৈঠক করছি। এখানে বৈঠকে সেচ বিভাগ এবং ভূমি দফতরের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার সে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।” অজয় ও দামোদরের বালি খাদান চালানো নিয়ে গত কয়েক মাসে বীরভূম ও বর্ধমানে বারবার শাসক দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সে নিয়ে এ দিন সেচমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘যারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, অবৈধ ভাবে বালি তুলছে, তারা অপরাধী। কোনও রাজনৈতিক দলের লোক হতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বীরভূম ও বর্ধমানে দিনেদুপুরে বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচারের অভিযোগ উঠছে অনেক দিন ধরেই। সম্প্রতি সে সব সরজমিনে খতিয়ে দেখায় উদ্যোগী হয়েছে সেচ দফতর।
সেচমন্ত্রীর নির্দেশে নানা জেলায় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে ইতিমধ্যেই টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। মন্ত্রী নিজেও মাঝে-মধ্যে অভিযান চালাচ্ছেন। এ দিনই যেমন ভেদিয়ায় চালান যাচাই থেকে শুরু করে পরিমাণ মোতাবেক বালি নেওয়া হচ্ছে কি না, সে সব দফতরে কর্মীদের দিয়ে মাপজোক করান মন্ত্রী। একাধিক গাড়িকে জরিমানাও করা হয় তাঁর নির্দেশে। মন্ত্রীর দাবি, “রয়্যালটি রেট কমেছে। কিন্তু রাজস্ব তিন-চার গুণ বেড়েছে। আগামি অর্থবর্ষে আরও অন্তত দেড় গুণ বাড়াব।”
বালি তোলা নিয়ে অসাধু ব্যবসার কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, “দুই জেলার সীমানা এলাকায় এই ধরনের প্রবণতা রয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কয়লা মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করেছেন। বালি মাফিয়াদেরও ক্ষেত্রে তা হবে।”
তবে তাঁর বক্তব্য, “বালি কারবার হওয়া দরকার। নদী থেকে বালি তোলা হলে নব্যতা বজায় থাকে। প্রচুর মানুষের জীবন-জীবিকাও রয়েছে। তবে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত পরিদর্শন ও অভিযান চলবে।’’ তিনি জানান, সেতু বা বাঁধ থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা যাবে না। সেচ দফতরের জমি থেকে বেআইনি দখলদার হঠাতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ দিন সিউড়ি ২ ব্লকে হুল উৎসবে যোগ দিয়েও বেআইনি বালি কারবার বন্ধের ব্যাপারে আশ্বাস দেন সেচমন্ত্রী। তিনি জানান, বাম আমলে ২, ৩ বা ৫ বছরের লিজ দেওয়ার পদ্ধতি চালু ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেচ দফতর গত অক্টোবরে বালি তোলার জন্য তিন মাসের ‘কোয়ারি পারমিট’ চালু করেছে। দু’ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু জটিলতা রয়েছে। সেটা সমাধান করে কী ভাবে একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া যায় দেখা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মাত্র ছ’মাসে সব কাজ হয়ে যাবে এমনটা ভাবলে ভুল হবে। তবে বছরখানেকের মধ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে।’’