অপরাধ কবুল, দাবি পুলিশের
Raghunathpur

শিক্ষক খুনে গ্রেফতার স্ত্রী

এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুক্রবার পাপিয়াকে ফের থানায় এনে জেরা করা হয়। ওই জেরাতেই শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে খুনের ঘটনার সাথে যোগাযোগের কথা স্বীকার করে নেন তিনি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২৬
Share:

ধৃত: আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাপিয়াকে (ইনসেটে নিহত চিন্ময় মণ্ডল)। ছবি: সঙ্গীত নাগ

ঘটনার ১৪ মাস পরে রঘুনাথপুরে নিহত শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডলের স্ত্রীকেই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত পাপিয়া মণ্ডল পেশায় রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নার্স। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের দাবি, খুনের পিছনে রয়েছে পাপিয়ার ‘বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক’। যদিও সে কথা মানতে নারাজ পাপিয়ার পরিবার।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, নানা তথ্য-প্রমাণে পাপিয়ার উপরে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছিল। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুক্রবার পাপিয়াকে ফের থানায় এনে জেরা করা হয়। ওই জেরাতেই শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে খুনের ঘটনার সাথে যোগাযোগের কথা স্বীকার করে নেন তিনি। তার পরেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”

বছর চারেক আগে পাড়া থানার ঝাপড়ার শুঁড়িকুলি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান চিন্ময়বাবু। বিয়ের সাত মাস পরেই, ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে খুন হন তিনি। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ আবার বেরিয়েছিলেন। পরের দিন রঘুনাথপুর মহকুমা স্টেডিয়ামে রঘুনাথপুর চক্রের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। তারই প্রস্তুতির কাজে গিয়েছিলেন চিন্ময়বাবু।

Advertisement

স্টেডিয়ামেই সহকর্মীদের সঙ্গে খিচুড়ি খেয়ে রাত ১০টা নাগাদ স্কুটার চালিয়ে ফিরছিলেন। বাড়ি থেকে পাঁচ-ছ’শো মিটার দূরে বারিকবাঁধ এলাকায় দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে তাঁকে। পুলিশের টহলদারি ভ্যান উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু তত ক্ণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে পর পর তিনটে গুলি করেছিল। গুলি লাগে চিন্ময়বাবুর মুখের বাঁ দিকে, চোখের নীচে আর শরীরের উপরের ভাগে।

তদন্তে নেমে খুনের কারণ ও দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে কার্যত কোনও তথ্যই পাচ্ছিল না পুলিশ। তবে ঘটনাস্থলেই মিলেছিল চিন্ময়ের স্কুটার, কয়েকহাজার টাকা ভর্তি মানিব্যাগ আর মোবাইল। যা থেকে পুলিশ আঁচ করেছিল, ছিনতাইয়ের জন্য খুন করা হয়নি। ঘটনার পরে দফায় দফায় জেরা করা হয় পাপিয়াকে। কিন্তু বিশেষ কিছু তখন জানতে পারেননি তদন্তকারীরা।

জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা দাবি করেন, ‘‘পাপিয়ার কম্পিউটার থেকে বেশ কিছু নথি পাওয়া যায়। যা দেখে বোঝা গিয়েছিল, একাধিক জনের সঙ্গে বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্ক জড়িত তিনি। খুনের তদন্তে নেমে সেই বিষয়ে আরও কিছু তথ্য আসে হাতে। কিন্তু কিছুতেই জেরায় পাপিয়া বিষয়টি স্বীকার করছিলেন না।’’

চিন্ময়ের মা মমতাদেবী জানান, খুনের ঘটনার দিন তিনেক পরেই বারিকবাঁধের শ্বশুরবাড়ি থেকে মুনসেফডাঙায় বাবার কাছে চলে গিয়েছিলেন পাপিয়া। মাঝে এক বার কিছু ক্ষণের জন্য শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। তা ছাড়া, কোনও রকমের যোগাযোগই রাখতেন না। মমতাদেবী বলেন, ‘‘সম্বন্ধ করেই ছেলের বিয়ে দিয়েছিলাম। ফলে, বৌমার সঙ্গে কারও সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানতাম না। পরে পুলিশের কাছে শুনেছিলাম। এক বার বৌমার সঙ্গে দেখা করে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্যও বলেছিলাম।”

এ দিন আদালতে পাপিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কথা বলতে দেয়নি। ধৃতের বাবা অনিল মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমার মেয়েকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। যেহেতু পুলিশ ওকে গ্রেফতার করেছে, তাই এর থেকে বেশি কিছু বলব না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement