বুজে: ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মালিগলি এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
গোটা শহরে অন্তত চল্লিশ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় নর্দমা। আর তা পরিষ্কারের জন্য রয়েছেন ৮০ জন সাফাইকর্মী। যদিও জনা পঞ্চাশের বেশিকে সাফাইয়ে পাওয়া যায় না। এক দিকে, সাফাই কর্মীর অভাব, অন্য দিকে, পরিকল্পনামাফিক হাইড্রেন তৈরি করতে না পারা— দু’য়েw মিলিয়ে নিকাশি সমস্যায় জেরবার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের পুরবাসী। পুরভোটের মুখে নিকাশি সমস্যাই এখন সবার মুখে মুখে ঘুরছে।
তবে সমস্যা মানতে নারাজ পুরপ্রধান তৃণমূলের মদন বরাট। তাঁর দাবি, ‘‘সাফাই কর্মীরা পুরসভার নর্দমাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করেন। তার পরেও নর্দমার মধ্যে আর্বজনা জমে থাকার অভিযোগ ঠিক নয়।’’ যদিও বিজেপি ও সিপিএমের স্থানীয় নেতত্বের কটাক্ষ, ‘‘বর্ষায় পুরভবনের পাশেই নতুন বাজারের মুখে নর্দমার জল উপচে রাস্তার উপরে বয়ে যায়। পুরপ্রধান মনে হয়, দেখতে পাননি।’’
পুরসভার কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের মতে, নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি। মূলত হাইড্রেন তৈরি করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ছোট নর্দমাগুলির সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে নোংরা জল শহরের বাইরে ফেলার কাজ পুরসভা করে উঠতে পারেনি বলেই সমস্যা দিন-দিন বাড়ছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নর্দমা তৈরি হলেও যেখানে তা শেষ হয়েছে, সেখানেই আর্বজনার স্তূপ জমে জল বেরনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল জমে যাচ্ছে। এ দিকে, আর্বজনা সাফাইয়ের কাজও নিয়মিত করা হয় না বলে অভিযোগ। অনেক এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নর্দমা উপচে রাস্তায় পড়ছে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা মানস দাস, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মলয় মণ্ডল, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝান্ডাপাড়ার বাসিন্দা শান্তনু দত্তের অভিযোগ, ‘‘কালেভদ্রে নর্দমা সাফাই করা হয়। তাই রাস্তায় নোংরা জল বয়ে যায়। পুরসভাকে সমস্যা জানিয়েও ফল হয় না।”
বিজেপির জেলা সম্পাদক বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল ১৫ বছর পুরসভা চালাচ্ছে। অথচ, এত দিনেও নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে উঠতে পারেনি তারা। পুরভোটে এর জবাব পাবে।” সিপিএমের রঘুনাথপুর এরিয়া কমিটির সদস্য লোকনাথ হালদার দাবি করেন, বাম আমলে চন্দননগরের একটি সংস্থাকে দিয়ে এই শহরের নিকাশি নিয়ে সমীক্ষা করানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই বোর্ডের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। কিন্তু সেই সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিকল্পনামাফিক কাজ করেনি তারা। নিজেরাও কোনও সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে কাজ করতে পারেনি।
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, হাইড্রেন তৈরি করে নর্দমার জল শহরের বাইরে উতলা, ভূতামা ও বুন্দলার জোড়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হোক। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘শহরকে পরিখার মত ঘিরে আছে তিনটি জোড়। ঠিক মতো পরিকল্পনা করে হাইড্রেন তৈরি করে নর্দমার জল জোড়ে ফেলা সম্ভব। এই কাজটা করতে পারলেই শহরের নিকাশির সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, জোড়ে নর্দমার জল ফেলার বিশদ পরিকল্পনা করে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে কয়েকবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ হয়নি। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর ‘ই’ ক্যাটাগরির পুরসভা। সে কারণে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আমাদের কম অর্থ বরাদ্দ করে। ফলে, যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে হাইড্রেন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, মোট সাফাই কর্মী ৯৬ জন থাকলেও তাঁদের মধ্যে চার জন স্থায়ী কর্মী ঝাড়ুদার। বাকি ৯২ জন অস্থায়ী কর্মীর মধ্যে ৮০ জন ‘ড্রেন কুলি’ ও ‘লোডার’। পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী বিজয় মহান্তি জানাচ্ছেন, সাফাই কর্মীর ঘাটতির কারণেই নালা পরিষ্কারে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘৮০ জনের মধ্যে দৈনিক ৩০ শতাংশের বেশি কর্মী অনুপস্থিত থাকেন। ফলে, জনা পঞ্চাশ সাফাই কর্মীকে নিয়ে ১৩টি ওয়ার্ডের নর্দমা কতখানি সাফাই করা সম্ভব? শহরে জনবসতির সঙ্গে নর্দমা বাড়লেও সামঞ্জস্য রেখে সাফাই কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়নি।’’
অন্য দিকে, সাফাই কর্মীদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের গামবুট, গ্লাভস দেওয়া হয় না। নর্দমা থেকে আর্বজনা তোলার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় কোদাল, গাইঁতি ইত্যাদি সরঞ্জামও নেই। কয়েকজন সাফাই কর্মীর অভিযোগ, ‘‘কার্যত হাত দিয়ে নর্দমা থেকে ময়লা তুলতে হয়। তার উপরে দৈনিক ১১০ টাকা মজুরিও অনেক অস্থায়ী কর্মীর পোষায় না। সে কারণে অনেকে আসতে চান না।’’
এই ব্যাপারে তাঁদের কার্যত করণীয় কিছু নেই বলে দাবি পুরপ্রধানের। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বহু বার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে স্থায়ী সাফাই কর্মী নিয়োগের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এক জনও কর্মী নিয়োগ হয়নি।”