নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই পুরএলাকায় বলবৎ হয়েছে আদর্শ আচরণ বিধি। কিন্তু তারই মধ্যে কয়েকটি পদে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর পুরসভার বিরুদ্ধে। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়েছে বলে শহরজুড়ে হইচই শুরু করে দিয়েছেন বিরোধীরা। চাপে পড়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছেন পুরপ্রধান।
বিরোধীদের তির রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান মদন বরাটের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই বিষয়ে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ তুলে পুরভবনে সম্প্রতি বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি প্রভাবিত রঘুনাথপুর মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্কাস ইউনিয়ন। তারা মহকুমাশাসকের কাছে পরীক্ষা স্থগিত রাখার দাবি জানায়। মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা বলেন, “নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে না পুরসভা। পুরকর্তৃপক্ষকে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে পুরসভায় ১৪টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। আবেদন করার শেষদিন ছিল ২৩ ফ্রেবুয়ারি। কয়েক হাজার আবেদন পত্র জমা পড়েছে। নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে তা পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলের সভায় বা সিলেকশন কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অথচ ক’দিন আগে পুরপ্রধান মদন বরাটের পাঠানো চিঠি দেখে সিলেকশন কমিটির সদস্যেরা জানতে পারেন, ৫ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ওই চিঠি ১৩ ফেব্রুয়ারি লেখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ওই চিঠি ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বস্তুত এই চিঠি মোটেই ১৩ ফেব্রুয়ারি লেখা হয়নি বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। ওই সিলেকশন কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর অভিযোগ, “১৮ মার্চ নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। কিন্তু তার আগে আমরা কেউই পুরপ্রধানের লেখা পরীক্ষা নেওয়ার চিঠি পাইনি। পরের দিন ১৯ মার্চ ওই চিঠি এসেছে। এতে স্পষ্ট যে নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হওয়ার পরে পুরপ্রধান ‘ব্যাক ডেটে’ ওই চিঠি ছেড়েছেন। এতে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়েছে।” পুরসভা সূত্রের খবর, বিজ্ঞপ্তি জারির পরের দিন দুপুরে পুরপ্রধানের পাঠানো এই চিঠি পৌঁছয় পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক গদাধর দাসের কাছে। কিন্তু ১৩ ফ্রেবুয়ারি তারিখ উল্লেখ করা চিঠি তিনি নিতে অসম্মত হন। গদাধরবাবু.অভিযোগ, তিনি ওই চিঠি নিতে অস্বীকার করায় পুরসভার চার অস্থায়ী কর্মী তাঁকে হেনস্থা করে এবং প্রাণে মারার হুমকি পর্যন্ত দেয়। তিনি রঘুনাথপুর থানায় ওই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুরনির্বাচনের মুখে পুরসভার নির্বাহী আধিকারিককে হেনস্থার খবর চাউর হতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় রঘুনাথপুর শহরে। আসরে নামে পুরসভার ওয়াকার্স ইউনিয়ন। সংগঠনের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান পুরভবনে। সংগঠনের নেতা প্রবীর মাহাতো, লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহেরা অভিযোগ করেন, “পুরসভায় দীর্ঘ দুই-তিন দশক ধরে যে সমস্ত অস্থায়ী কর্মীরা কাজ করছে তাঁদের বঞ্চিত করে পুরপ্রধান চুপিসাড়ে তৃণমূলের কর্মীদের কাজে নিয়োগের চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেও তিনি অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদগুলিতে নিয়োগের জন্য পাঁচজনের একটি সিলেকশন কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে দুই সরকারি কর্মী ছাড়াও রয়েছেন তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর ও পুরসভার বিরোধী দলনেতা। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা সংক্রান্ত বির্তকিত চিঠি হাতে পান বিরোধী দলনেতা মৃত্যুঞ্জয়বাবু ও পুরসভার তৃণমূলের দলনেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতা। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ার পরে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষা নেওয়া যায় না। তবুও পুরপ্রধান মদনবাবু অবৈধ ভাবে ফ্রেবুয়ারি মাসের তারিখ দেওয়া একটি চিঠি বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এতেই স্পষ্ট ওই পদগুলিতে পুরনির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো করে নিজেদের দলের লোকজনদের নিয়োগ করাতে চাইছেন তিনি।” নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে এই পরীক্ষা সংক্রান্ত চিঠি সিলেকশন কমিটির সদস্যদের কাছে পাঠানো কখনই সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন ওই কমিটির সদস্য তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর বিষ্ণুচরণবাবুও। তবে পুরপ্রধান মদন বরাটের দাবি, “পরীক্ষার ওই চিঠিতে তারিখ ভুল লেখা হয়েছিল। তবে পুরসভার নির্বাহী আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষা আপাতত স্বগিত করে দেওয়া হয়েছে। হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত চার কর্মীকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।”