শহর বাড়লেও নিকাশি বেহালই

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাজল পোড়েল। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার কথা ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাজল পোড়েল। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার কথা ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫১
Share:

কলকারখানার ধোঁয়ায় ঢাকা বড়জোড়ার আকাশ। প্রশাসনের দাবি, নজরদারি চলছে। কিন্তু দূষণ নিয়ে তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

• সমগ্র বড়জোড়া ব্লক সদর জুড়েই জল নিকাশি ব্যবস্থার হাল খারাপ। নালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। নালার জল শহরের বাইরে ফেলার ব্যবস্থাও করা হয়নি। এলাকায় পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা চাই। বর্জ্য ফেলার জন্য ডাস্টবিনও চাই।

Advertisement

অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়, বড়জোড়া

সভাপতি: এলাকায় নিকাশি সমস্যার কথা জানি। গোটা বড়জোড়া এলাকায় নতুন করে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার একটা সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। তবে, এ জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। যা কেবলমাত্র পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকেও আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। পাশপাশি রাজ্য পঞ্চায়ত দফতর থেকে যাতে এই প্রকল্পের জন্য সাহায্য করা হয়, তার জন্য শীঘ্রই আবেদন করব।

Advertisement

• শিল্পকেন্দ্রিক বড়জোড়ায় অবসর বিনোদনের জায়গার অভাব রয়েছে। এই শহরে একটিও পার্ক নেই। প্রবীণ নাগরিক থেকে ছোট ছেলেমেয়ে সকলেই এতে সমস্যায় পড়ে। শহরে একটি শিশু উদ্যান গড়া হোক।

সমীর কুমার পান্ডে, বড়জোড়া

সভাপতি: বড়জোড়ার বড় বাঁধ রাজারবাঁধকে কেন্দ্র করে একটি উদ্যান গড়ার ভাবনা চিন্তা আমাদের রয়েছে। তবে সেখানে কৃষি-সেচ দফতরের সাহায্য দরকার। ওই দফতরকে একবার বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কিছু জানায়নি। তাই আপাতত বড়জোড়া থানার প্রাঙ্গণেই একটি উদ্যান গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এ জন্য সাংসদ সৌমিত্র খাঁ পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। থানার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। পুলিশের তরফে অনুমতি মিললেই আমরা উদ্যান গড়ার কাজ শুরু করব।

• ব্রিটিশ আমলে ১৯৩২ সালে মালিয়াড়ায় একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল গড়া হয়েছিল। সেখানে টেলারিং, তাঁতের কাজ, কামার শালের মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র শিল্পে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বর্তমানে স্কুলটি চালু থাকলেও সময় উপযোগী কোনও হাতের কাজ বা ক্ষুদ্র শিল্পের প্রশিক্ষণ এখানে দেওয়া হয় না। স্কুলটিকে আধুনিকীকরণ করে আরও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলে এলাকার যুবপ্রজন্ম উপকৃত হবে।

সমরেন্দ্র মিশ্র, মালিয়াড়া

সভাপতি: সাধারণ মানুষকে সাবলম্বী করতে সরকারি ভাবে ব্লকের বিভিন্ন জায়াগায় হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে। তবে মালিয়াড়ার ওই স্কুলের বিষয়ে আমাকে আগে কেউ জানাননি। ওই স্কুলটির বর্তমান কী অবস্থা, তা নিয়ে খোঁজ নেব।

• শিল্পাঞ্চল হওয়ায় নানা রাজ্যের মানুষ বড়জোড়ায় আসেন। কিন্তু এখানে একটিও সরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল নেই। ফলে এলাকার ছেলেমেয়েদের দুর্গাপুর বা পড়শি ব্লক গঙ্গাজঘাটির দুর্লভপুরে পড়াশোনার জন্য পাঠাতে বাধ্য হন অভিভাবকেরা। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্লক সদরে একটি সরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল চালু করার দাবি তুলে আসছি। প্রাশাসন এ নিয়ে ভাবলে উপকৃত হব।

পার্থ মণ্ডল, বড়জোড়া

সভাপতি: এলাকায় সরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল চালুর ব্যাপারে সর্বশিক্ষা মিশন ও জেলা স্কুল দফতরের সঙ্গে আলোচনা করব।

• বড়জোড়া ব্লকে বহু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরগুলি এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে। তবে ঘুটগোড়িয়ার রাধা দামোদর মন্দির ও জগন্নাথপুরের রত্নেশ্বর শিব মন্দির ছাড়া আর কোনও মন্দিরই সংরক্ষণ করেনি সরকার। ফলে বড়জোড়া, মালিয়াড়া, সাহারজোড়া, কাদাশোল, গোবিন্দপুর, পখন্না এলাকায় বহু অসংরক্ষিত মন্দির দেখভালের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। কলকারখানার দুষণে জনজীবনে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনই এই মন্দিরের কারুকার্যগুলিও নষ্ট হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি কিছু করতে পারে?

সুমন মুখোপাধ্যায়, বড়জোড়া

সভাপতি: প্রাচীন মন্দিরগুলি যাতে সংরক্ষণ করা হয়, তা নিয়ে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের কাছে আবেদন জানাব। দূষণের মাত্রা কমাতে কলকারখানাগুলির উপর নিয়মিত নজর রাখছে প্রশাসন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

• হাতি নিয়ে স্থায়ী সমাধান হয়নি। প্রায়ই গ্রামে হাতি ঢুকে ঘরবাড়ি ভাঙে। রাতে গ্রামে ফেরার সময় রাস্তায় হাতির হানার মুখে পড়েন সাধারণ মানুষ। সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।

ফাল্গুনী মণ্ডল, শীতলা

সভাপতি: বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের তৎপরতায় এ বার বড়জোড়ায় দল হাতি ঢুকতেই পারেনি। ফলে সমস্যা অনেকটাই কমেছে। তবে কিছু রেসিডেন্ট হাতি রয়েছে এলাকার জঙ্গলে। সেগুলিই মাঝে মধ্যে গ্রামে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে। হাতি সমস্যা নিয়ে বন দফতরের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। রেসিডেন্ট হাতিগুলি যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে, তার জন্য বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জঙ্গলের পাশে গর্ত খুঁড়েও হাতিগুলিকে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

• বড়জোড়া ব্লক কমিউনিটি হলে সৌন্দর্যায়ন ও সংস্কারের দাবিতে আমরা একাধিকবার ব্লক অফিসে জানিয়েছি। অথচ হলটি সংস্কারের উদ্যোগ এখনও নেয়নি প্রশাসন। এলাকায় আর দ্বিতীয় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের হল নেই। অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নড়েচড়ে বসা উচিত।

কাঞ্চন বিদ, বড়জোড়া

সভাপতি: ব্লক কমিউনিটি হলটিকে সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারেরা হলটি দেখেও গিয়েছেন। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement