ইলামবাজারের খরুই মোড় থেকে টিকরবেতা পর্যন্ত রাস্তা ঢালাই করার কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।
ইলামবাজারের জয়দেব মোড় থেকে জয়দেব-কেঁদুলি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সেই রাস্তা সংস্কারের কাজে হাত পড়েছে। পুরো রাস্তাই কংক্রিটের হবে বলে পূর্ত দফতর সূত্রের খবর। তার জন্য খরচ হবে ৩২ কোটি টাকা।
তবে, পুরো রাস্তার কাজ এক সঙ্গে হবে না। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় ওই রাস্তার ইলামবাজারের খরুই মোড় থেকে টিকরবেতা মোড় পর্যন্ত ৪.৬ কিলোমিটার অংশ ঢালাই করা হবে। সেই জন্য ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এই মর্মে মহকুমাশাসক (বোলপুর) নির্দেশিকাও জারি করেছেন। মহকুমাশাসক অয়ন নাথ বলেন, ‘‘পূর্ত (সড়ক) দফতরের আধিকারিকেরা চার মাস পর্যন্ত ওই রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ চেয়েছিলেন, যাতে ওই রাস্তায় কাজ করতে পারেন। সেটা অনুমোদন করা হয়েছে। সেই মতো বিকল্প পথ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।’’
পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কের জয়দেব মোড় থেকেই ডান দিকে ঘুরে গিয়েছে জয়দেব-কেঁদুলি যাওয়ার ওই রাস্তা। জেলার অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থানগুলির অন্যতম জয়দেবের রাধাবিনোদ মন্দিরে যাওয়ার ওটাই প্রধান রাস্তা। অন্য দিকে, অজয় নদ পেরিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা থেকে বীরভূমে ঢোকার অন্যতম পথও এটি। বছর চারেক আগে রাস্তাটি সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু, এক-দেড় বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত ভারী যান চলাচলের ফলে রাস্তা বেহাল হয়। অভিযোগ, রাতদিন মূলত বালি বোঝাই ভারী যান চলাচলে পিচ উঠে গিয়ে বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছিল রাস্তা। রাস্তা সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছিল।
তার পরেই ওই রাস্তা নতুন করে তৈরিতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। চলতি ফেব্রুয়ারিতে সিউড়িতে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকায় ছিল জয়দেবের রাস্তাটিও। এপ্রিলে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে ওই রাস্তায় যানচলাচলের চাপ সামলে একবারে পুরো রাস্তার কাজ হাত দেওয়া থেকে সরে ভাগ করে রাস্তাটি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সূত্রের খবর, গত ১২ জুন সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। সেখানে ইলামবাজারের বিডিও, ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ, ইলামাবাজার থানার ওসি, জয়দেব-কেঁদুলি পঞ্চায়েতের প্রধান, শীর্ষা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান এবং পূর্ত (সড়ক) দফতরের আধিকারিকেরা ছিলেন। ওই বৈঠকে সেখানেই ঠিক হয়, ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কের জয়দেব মোড় থেকে ২.৪ কিলোমিটার ছেড়ে খরুই মোড় থেকে ৭ টিকরবেতা পর্যন্ত রাস্তাটি করতে হলে দখলদারদের সরাতে হবে। বন দফতরকে গাছ কেটে ফেলতে হবে এবং চার মাসের জন্য রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে পায়ের মোড়ে হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। পূর্ত (সড়ক) দফতরের ডিভিশন ২-এর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন মল্লিক বলেন, ‘‘এক অংশের কাজ শেষ করে অন্য অংশ শুরু হবে। জোর কদমে কাজ শুরু হয়েছে। পুরো রাস্তার জন্য বরাদ্দ ৩২ কোটি টাকা।’’
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন ভাবে কংক্রিট ঢালাই করা হবে, যাতে ভারী গাড়ি চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত না-হয় ওই রাস্তা। বালি বোঝাই গাড়ি থেকে জল ঝরে পড়লেও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না। রাস্তার কাজ দেখে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও।