হেঁসেলে দ্রৌপদীরা।—ফাইল চিত্র
ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালে কামরাতেই যাত্রীর হাতে পৌঁছে যাবে খাবারের প্যাকেট। নিখাদ বাঙালি খানা!
ভাত, ডাল, পোস্তবড়া, পাঁচমিশেলি থেকে শুরু করে মাছের কালিয়া। চাইলে পরোটা, বিরিয়ানি, ডালমাখানি কিংবা কষা মাংসও মিলবে। যাত্রীকে স্রেফ টিকিট কাটার পরে কিংবা ট্রেনের কামরা থেকেই আইআরসিটিসি-র সাইট খুলে জানিয়ে দিতে হবে তিনি কী
খেতে চান।
রেলযাত্রীদের কাছে বিভিন্ন স্বাদের ঘরোয়া খাবার পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি)। পশ্চিমবঙ্গে আপাতত দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনে চালু হচ্ছে এই পরিষেবা। আদ্রার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অনশূল গুপ্ত বলেন, ‘‘দেশের পূর্বাঞ্চলে আদ্রা ডিভিশনেই প্রথম স্বনির্ভর দলের মহিলারা ট্রেন যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করবেন। খুব শীঘ্রই প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এটা আমাদের কাছ অত্যন্ত আনন্দের কথা।’’ আইআরসিটিসি-র পূর্বাঞ্চলের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার অনুজ দত্তর কথায়, ‘‘রেল মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত মেনেই এই স্বনির্ভর দলকে ই-ক্যাটারিং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। যাত্রীরা যে ধরনের খাবার অর্ডার দেবেন, তাই সরবরাহ করবেন দলের সদস্যারা।’’ তিনিও জানিয়েছেন, স্বনির্ভর দলের সঙ্গে আইআরসিটি-র গাঁটছড়া বাঁধা পূর্বাঞ্চলে এই প্রথম।
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, অনেক যাত্রী এখন ট্রেনেও ঘরোয়া রান্না খেতে চান। বিশেষ করে অসুস্থরা রেলে সরবরাহ করা খাবার মুখে দিতে পারেন না। সাধারণ যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই রেল কর্তারা দেশ জুড়ে এই প্রকল্পটি চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। রেল সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার ‘মনোরমা পরিষেবা সমবায় সমিতি’ নামে একটি স্বনির্ভর দল পূর্বাঞ্চলে প্রথম রেলযাত্রীদের রসনা তৃপ্তির দায়িত্ব পাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০-এ জাতীয় সড়কের ধারে হুড়া ব্লকে সরকারি পান্থশালা ‘পথের সাথী’তে খাবার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ওই দলটি। চলতি অগস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারোদ্ঘাটন করেছেন এই পান্থশালাটির। এই পান্থশালা চালানোর জন্য জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল মনোরমা পরিষেবা সমবায় সমিতির সদস্যাদের। রঘুনাথপুর ১ ও ২ এবং কাশীপুর— এই তিনটি ব্লক এলাকার মহিলাদের নিয়ে গড়ে তোলা এই সমবায়টিকে একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রান্নার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। লুচি-তরকারি, রুটি বা পরোটা সব্জি থেকে ধোসা-ইডলি বা টোস্ট-ওমলেট বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাঁরা। রান্না শেখানোর দায়িত্বে থাকা সংস্থার অধীনে থেকে শিখেছেন ভাত, ডাল, পাঁচমিশেলি তরকারি থেকে মাছ, চিকেন, পনিরের নানা পদ থেকে বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস।
পুরুলিয়া জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের আধিকারিক অমল আচার্য বলেন, ‘‘গত বছর নভেম্বরে আমরা রেলের পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাব পাই। আমরা যোগাযোগ করি আইআরসিটিসি-র সঙ্গে। যে সংস্থা যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করবে, তাদের খাবার সরবরাহের অভিজ্ঞতা ও ফুড লাইসেন্স রয়েছে কিনা, এ রকম কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল। সেই সব কাগজপত্র জমা করার পরেই আইআরসিটিসি ছাড়পত্র দিয়েছে।’’ জেলা গ্রামোন্নয়ন শাখার আধিকারিক সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস জানান, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কেরলের পর পূর্বাঞ্চলে পুরুলিয়ার এই স্বনির্ভর দলই প্রথম এই দায়িত্ব পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই আইআরসিটিসির সাইটে মনোরমার বঙ্গ আহারের নানা পদ মিলছে।
জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সচরাচর আমরা যে সমস্ত কাজের মধ্যে স্বনির্ভর দলের সদস্যাদের থাকতে দেখি, তার বাইরের পেশাও তাঁরা বেছে নিতে পারেন, এটা তারই প্রমাণ। এই ধরনের পদক্ষেপ অন্য দলের সদস্যাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’’ এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে খুশি মনোরমার সদস্য শিখা নাথ, সুজাতা সাউরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এত দিন বাড়ির লোকের জন্য রান্না করেছি। পান্থশালায় অতিথিদের জন্য রান্না করে ভাল লাগছিল। এ বার ট্রেনের যাত্রীদের ভাল-মন্দ খাওয়াতে পারব ভেবে আরও ভাল লাগছে। সঙ্গে বাড়তি রোজগারও হবে।’’