পুরুিলয়া শহরের জলের ভরসা জল-হীন কংসাবতী নদী। নিজস্ব চিত্র
উদ্বেগজনক ভাবে নেমে গিয়েছে কংসাবতীর জল স্তর। ফলে পানীয় জলের সঙ্কট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি জানিয়েছেন, সমস্যা সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠাবে পুরসভা। বিশেষজ্ঞদের সহায়তাও নেবেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরুলিয়া শহরে পানীয় জলের প্রধান উৎস কংসাবতী নদী। নদীর জল স্তর আশঙ্কাজনক ভাবে নেমে গিয়েছে। পর্যাপ্ত জলের জোগান দিতে না পারায় সম্প্রতি পুরসভা বিজ্ঞপ্তি জারি করে শহরবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ২৩টি ওয়ার্ডে বাসিন্দার সংখ্যা কমবেশি দেড় লক্ষ। প্রতিদিন শহরে পানীয় জলের চাহিদা ১৪ মিলিয়ন লিটার। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তেলেডি, শিমূলিয়া ও ডাবর-বলরামপুর ঘাট থেকে মেরেকেটে কোনওদিন ৫, কোনও দিন ৬ মিলিয়ন লিটার জল পাওয়া যাচ্ছে। মোট চাহিদার অর্ধেক জলও মিলছে না। কী ভাবে সরবরাহ সচল রাখা যাবে? এই পরিস্থিতিতে শহরে নলবাহিত পানীয় জলের সরবরাহ করা হচ্ছে এক বেলা। প্রতি দু’দিনে এক দিন বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জলের সরবরাহ সচল রাখার অন্য কোনও উপায় নেই।’’
শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, অতীতেও এ রকম গরম পড়েছে। তবে কেন এ বছর সঙ্কট এত তীব্র?
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘প্রথমত, শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, টান পড়েছে জলের উৎসে। জলই মিলছে না। নদীবক্ষে বালির স্তরে সঞ্চিত জল চুঁইয়ে নীচে জমা হয়। নদী শুকনো থাকাকালীন সেই জল পাম্পের সাহায্যে তুলে সরবরাহ করা হয়। বাস্তুকারেরা বলছেন, দিনের পর দিন বালির স্তর উধাও হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।’’ পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘নদীর একটি ঘাটে কয়েক বছর আগেও বালির স্তর ছিল ২০-২২ ফুট। সেই ঘাটে এখন বালির স্তর ১৫ ফুটে নেমেছে। এ ভাবে পানীয় জলের ঘাট লাগোয়া এলাকা থেকে বালি উধাও হলে, কী ভাবে জল মিলবে?’’
শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, দেদার চুরি হচ্ছে নদীর বালি। কিন্তু তা রোখার ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে, শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়। নদীবক্ষে বালির নীচে ‘ইনফিল্টেশন গ্যালারি’ (নদীর তলায় আড়াআড়ি কংক্রিটের বাঁধ) তৈরি করে বালির স্তরে সঞ্চিত জল তুলে বাড়তি জল বাড়ি বাড়ি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘বালি চুরি যে হচ্ছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। না হলে বালির স্তর কমছে কেন? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বালি কমে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা। আমরা চাই, শহরের পানীয় জলের ঘাট এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ হোক।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বর্ষায় কংসাবতী নদী দিয়ে প্রচুর জল বয়ে যায়। কী ভাবে তা ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা চাইব।’’
গত বছরের মে মাসে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে নবেন্দুর কাছে শহরে পানীয় জলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে আমার কাছে শহরে জলের অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। পুরো পরিস্থিতির কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করব।’’