পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য শহরবাসীর থেকে বাড়তি কোনও অনুদান নেবে না পুরুলিয়া পুরসভা। খাতায়-কলমে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শনিবার এই কথা জানিয়েছেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান। তৃণমূল সূত্রের দাবি, শুক্রবার দলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুদানে আপত্তির কথা পুরসভাকে জানিয়েছেন।
গত অগস্টে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে পানীয় জলের একশোটি করে সংযোগ দেওয়া হবে। কারা সংযোগ পাবেন সেটা লটারি করে বেছে নেওয়া হবে। তার জন্য পাঁচশো টাকা দিতে আবেদনপত্র তুলে জমা করতে হবে পুরসভায়। ২০ অগস্ট ছিল আবেদন জমা করার শেষ দিন। পুরসভা সূত্রের খবর, সংযোগ চেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার আটশো আবেদন জমা পড়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, যিনি সংযোগ পাবেন, তাঁকে অনুদান বা ‘সার্ভিস চার্জ’ হিসেবে পুরসভাকে তিরিশ হাজার টাকা দিতে হবে। পুরপ্রধান শনিবার বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের কথা ভেবে দল জানিয়েছে, অনুদান বাবদ তিরিশ হাজার টাকা নেওয়া যাবে না। ওই টাকা নেওয়া হবে না।’’
ষাটের দশকের মাঝামাঝি পুরুলিয়া শহরে নলবাহিত পানীয় জলের প্রকল্পটি গড়ে উঠেছিল। সেই সময়েই বাড়িতে বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়। দিনে দিনে শহর বেড়েছে। জলের চাহিদাও বেড়েছে। ২০১০ সালে পুরভোটের আগে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে। দল ক্ষমতায় এলেও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। তবে রাজ্যে পালাবদলের পরে ‘বিশেষ পশ্চাদপদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল’ থেকে পুরুলিয়া শহরে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য টাকা বরাদ্দ হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে ওই প্রকল্পের জন্য ৭০ কোটি ৬ লক্ষ ২২ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। কাজ শুরু হয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও প্রকল্পের ৬৪ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা হাতে এসেছে। এত দিন শহরে পানীয় জলের উৎস ছিল পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কংসাবতীতে শিমুলিয়া ও তেলেডি পাম্পিং স্টেশন। সেগুলি সংস্কার হয়েছে। ছোট বলরামপুর এলাকায় নতুন একটি পাম্পিং স্টেশনও গড়ে উঠেছে। পুরনো দু’টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক ছিলই। আরও পাঁচটি নতুন ওভারহেড ট্যাঙ্ক হয়েছে শহরে। তাতে জল ভরতে মাটির নীচে গিয়েছে ১১ কিলোমিটার পাইপ। ২৩টি ওয়ার্ডে ১৫০ কিলোমিটার নতুন পাইপ লাইনও বসানো হয়েছে। বাড়তি জলের জন্য তেলেডি পাম্পিং স্টেশনে হয়েছে ‘ইনফিল্টেশন গ্যালারি’।
জলের সংযোগ দিতে অনুদান নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন কিছু বাসিন্দা। তবে বিরোধীদের কোনও আন্দোলন দেখা যায়নি। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, অগস্টে বলরামপুরে সভা করতে এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জেলা নেতৃত্বকে ওই অনুদান না নিতে বলেছিলেন। কিন্তু পুরসভার তহবিলের অবস্থার কথা বলা হয় তাঁকে। পুরসভা সূত্রের দাবি, যে ঠিকাদারের দায়িত্বে পাম্পহাউস ছিল, তাঁর বকেয়া আড়ই কোটি টাকা। অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লাগে। কর্মীদের গ্রাচুইটি বাবদ দু’কোটি টাকা দেনা রয়েছে। মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটের হাত থেকে পুরসভা যখন এই প্রকল্প নেবে, তখন প্রতি মাসেই নতুন করে আরও খরচের বোঝা চাপবে। তাই জলকর নয়, অনুদান বাবদ এই টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুরসভার তৃণমূলের লোকজন রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছিল। কিন্তু কোনও ভাবেই অনুদান নেওয়া যাবে না বলে শুক্রবার অভিষেক জানিয়ে দেন বলে দল সূত্রের দাবি।
এ বার কি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি হবে? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করব।’’ দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা কাউন্সিলর বিভাস দাস বলেন, ‘‘দল যখন নির্দেশ দিয়েছে সেটা পালন করতে হবে।’’ বিরোধী দলনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পুরসভা অনুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েই তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এই আমলে কোনও কিছুই গণতান্ত্রিক ভাবে হয় না।’’