কাশীপুরের কেলিয়াথোল গ্রামে শ্রমিকের দুয়ারে পঞ্চায়েতের কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র ।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি যাতে মসৃন ভাবে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়, সে জন্য বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা শুরু হয়েছে পুরুলিয়া জেলায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০টি ব্লক ছাড়াও কংসাবতী (উত্তর), কংসাবতী (দক্ষিণ) এবং পুরুলিয়া বনবিভাগ ও সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অযোধ্যা ও সাহারজোড় প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের ১১৮ কোটি ৬৭ লক্ষের বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। মজুরি বকেয়া থাকা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৫৪ হাজার।
বকেয়া পারিশ্রমিকের টাকা পেতে শ্রমিকদের যাতে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয়, রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জেলা প্রশাসনকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। দফতরের কমিশনার ভিডিয়ো কনফারেন্স করে কী করণীয়, তা স্পষ্ট করে দেন। এরপর প্রতিটি ব্লক জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের কাছে সেই নির্দেশ পৌঁছে দিয়ে দ্রুত মাঠে নামতে নির্দেশ দেয়।
ইতিমধ্যে পঞ্চায়েতের কর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে মজুরি বকেয়া থাকা শ্রমিকদের খোঁজ নিয়ে তথ্য মেলাতে শুরু করেছেন। ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে পঞ্চায়েতের সচিব, সহায়ক, নির্মাণ সহায়ক, গ্রাম রোজগার সহায়ক, নির্বাহী সহায়ক, ভিআরপি, ভিএলই-সহ সমস্ত ধরনের কর্মীরা মাঠে নেমে পড়েছেন।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের পুরুলিয়া জেলা নোডাল অফিসার দেবর্ষি নাগ বলেন, ‘‘পারিশ্রমিকের টাকা শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।’’ তিনি জানান, শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি সচল রয়েছে কি না, কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে কি না, এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর নিকটাত্মীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংগৃহীত তথ্য ব্যাঙ্কগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপরে ব্যাঙ্ক শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট যাচাই করবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। তার আগে বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের কাজ ব্যাঙ্কগুলিকে শেষ করতে হবে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে বুধবার ও শেষে রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার তপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলি এই কাজ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে বুধবারও ছুটি পড়ে গিয়েছে।’’
যদিও কটাক্ষ করতে ছাডেনি বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘সবটাই বোধহয় ভোট সর্বস্ব। আমাদের প্রশ্ন, এতদিন কেন দেননি? কেন্দ্রীয় সরকার যখন টাকা দিত, তখন কি এ ভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে যাচাই করা হত? ঝোলা থেকে যাতে বেড়াল বেরিয়ে না পড়ে, সে জন্যই কি বাড়ি বাড়ি ঘুরে সঠিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে?’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার পাল্টা জবাব, ‘‘বাংলা এই প্রকল্পে কেন্দ্রের বিচারে এক নম্বরে। কেন্দ্রীয় দল বারবার রাজ্যে এসেও কোনও গলদ খুঁজে পায়নি। তারপরেও রাজনৈতিক ভাবে পেরে না ওঠায় রাজ্যের শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। তাই মানবদরদি মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপ করছেন।’’