পোস্তর বড়া।
নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিস থেকে জ্বালানি বা ভোজ্য তেলের দাম তো বাড়ছিলই এবার অস্বাভাবিক ভাবে দাম বাড়ছে পোস্ত’রও। পোস্তর বড়া, আলু পোস্ত, পেঁয়াজ পোস্ত, ঝিঙে পোস্ত, রুই পোস্ত হলে তো কাথাই নেই। নিদেন পক্ষে পোস্তবাটা হলেও রাঢ়বঙ্গের ভোজন রসিকেরা তৃপ্তি করে খান। কিন্তু সেই অভ্যাস এবার বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ।
বুধবার বাজার ঘুরে দেখা গেল, খোলা বাজারে পোস্তর দাম কেজি প্রতি ১৮০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। বছরের শুরুতেও যা ১৫০০-১৬০০ টাকার মধ্যে ছিল। আর ওই পোস্তই যদি প্যাকেটজাত হয় তাহলে প্রতি কেজির দাম ২৩০০ টাকারও বেশি এখন। দুবরাজপুর বাজারের একটি মুদিখানা দোকানে পোস্ত’র দাম জানতে চাওয়া ক্রেতা কল্যাণ মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘কী করব বলুন তো! আগে মাসকাবারি বাজারে এক কেজি করে পোস্ত যেত বাড়িতে। এখন সেটা কমে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে পরিমাণ আরও কমাতে হবে এই হারে দাম বাড়লে।’’ হোটেলের মেনু থেকেও পোস্তর পদ গায়েব হয়ে গিয়েছে। কেউ আবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বাজারদরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। একটি পোস্তর বড়া ৭৫ টাকা, এক প্লেট পেঁয়াজ পোস্ত ৮০ টাকা, পোস্ত বাটা ৮৫ টাকা!
সিউড়ি জেল গেটের কাছে হোটেল ব্যবসায়ী শান্তনু আচার্যের কথায়, ‘‘আমরা প্যাকেটজাত পোস্ত প্রায় ২৪০০ টাকা কেজি দরে কিনি। আর পোষানো যাচ্ছে না। এরপর মেনু থেকে পোস্তর পদ বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ সিউড়ি মসজিদ মোড়ের কাছে আরেকটি হোটেলের মালিক নির্মল খুরমা বলেন, ‘‘দাম বাড়ায় আগেই তালিকা থেকে পোস্ত বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ অন্যদিকে,
শান্তিনিকেতনের এক হোটেল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সপ্তাহে সাতদিন মেনুতে আলু পোস্ত থাকলেও এখন সেটা কমিয়ে চার দিন করা হয়েছে। অনেকে পোস্তর বিকল্প হিসেবে সাদা তিল বেটে কাজ চালাচ্ছেন।
জেলার ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, ২০১৯ সালের পর থেকেই পোস্তার দাম উর্ধ্বমুখী। এ দেশে পোস্ত চাষ নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেবল মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কিছুটা পোস্ত চাষ হলেও তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। তার কারণ, পোস্তর বেশির ভাগটাই মূলত তুরস্ক ও চিন থেকে আসত। কিন্তু তুরস্ক থেকে সেই আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চাহিদা ও জোগানের সামঞ্জস্য না থাকায় দাম ক্রমশ বেড়েছে। পুজো পর্যন্ত আরও কয়েকশো টাকা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।